পুলিশের নজরে মেমৈরির বাজি কারখানা। প্রতীকী চিত্র।
বাজি তৈরি করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে আগে। তবু কারবার বন্ধ হয় না। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ঘটনার পরে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ও কালনার বাজি তৈরির গ্রামগুলির পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, কালনার যে সব জায়গায় বাজি কারখানা চলত, সেগুলি বন্ধ করা হয়েছে। তবে মেমারিতে এখনও বাজি তৈরি হচ্ছে বলে স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি। এগরা-কাণ্ডের পরে মেমারির গৌরীপুর, মাতিশ্বর বাজার-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে অভিযানওচালিয়েছে পুলিশ।
বেশ কয়েক বছর আগে কালনা ২ ব্লকের আনুখালে একটি বাড়িতে বাজি তৈরির সময়ে আচমকা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় এক দম্পতির। স্কুলে থাকায় বেঁচে যায় তাঁদের দুই ছেলে। তারও ছ’বছর আগে ঝাঁপান উৎসবের জন্য বাজি তৈরি করতে গিয়ে এই ব্লকের কাদিপাড়া গ্রামে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৯ জনের। এলাকার মানুষের ক্ষোভ, বড় দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ে। তার পরে আবার সেই অবস্থা ফিরে আসে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) কল্যাণ সিংহরায় যদিও বলেন, ‘‘সারা বছরই বাজি কারখানাগুলিতে আমাদের নজর থাকে। অভিযান চালানো হয়।’’ কালনা থানা সূত্রেরও দাবি, কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনার পরে বেশিরভাগ কারখানায় বাজি আর তৈরি হয় না। তবু এগরা-কাণ্ডের পরে খোঁজ নেওয়া, তল্লাশি চালানো হয়েছে।
মেমারির দেবীপুর পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি ঘরে বাজি কার্যত ‘কুটির শিল্প’ বলে স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি। অভিযোগ, ছ’সাতটি পরিবারের বাসিন্দার বাজি তৈরির অনুমোদন থাকলেও, আরও অন্তত গোটা পনেরো ঘরে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি হয়। আবার অনুমোদন থাকা নানা ‘কারখানায়’ নির্দিষ্ট বারুদের ওজনের চেয়ে বাজি তৈরি হয়বলেও অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, দেবীপুরে বাজির বরাত নেওয়া ও ক্রেতার হাতে তা তুলে দেওয়া হয় যথেষ্ট গোপনীয়তা রেখে। সকাল ৭টা নাগাদ কাজ শুরু হয়ে যায়। মালিকপক্ষ প্রথমে শ্রমিকদের মশলার ভাগ বুঝিয়ে দেন। আছাড়ে বোমা বা ভুঁইপটকার জন্য পাথর, মশলা কাগজে জড়িয়ে দিতে পারলে প্রতি হাজারের জন্য মেলে ১২-১৫ টাকা। পরে রঙিন কাগজে আঠা দিয়ে তা মুড়ে দেওয়ার জন্য মেলে আরও ১৮-২০ টাকা মজুরি। জানা গেল, কারখানায় যেমন বসে বাজি তৈরি হয়, তেমনই অনেকে বাড়িতে মশলা নিয়ে গিয়েও বাজি তৈরি করে পরে তা কারখানায়পৌঁছে দেন।
বাজি তৈরিতে যুক্ত কয়েক জন দাবি করেন, ৬০-৭০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় তাঁরা এই কাজ করছেন। ‘তুবড়ি-বোমা’, ‘গাছ-বাজির বরাত পেলে আয় ভাল হয়। এখন বাড়ির মহিলারাও আতশবাজি তৈরিতে হাত পাকাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, এগরা-কাণ্ডের পরেই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। সব রকম বাজি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি, বাজি তৈরি করতে অন্য জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারেও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। কে কোথায় যাচ্ছে, তা খোঁজ রাখা হচ্ছে।
প্রতি বছরই বাজি তৈরি করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হচ্ছে, প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছেন। তার পরেও ঝুঁকি নেওয়ার কারণ কী? বাজি কারখানার কর্মীদের একাংশের দাবি, একশো দিনের কাজ চালু থাকার সময়ে বাজি তৈরিতে এত ‘ভিড়’ ছিল না। কালীপুজোর সময়ে বাইরে থেকে লোক আনতে হত বা স্থানীয়দের বাড়তি টাকা দিয়ে কাজে নেওয়া হত। এখন সারা বছরই আতশবাজির চাহিদা আছে। লোকের হাতে অন্য কাজ তেমন না থাকায় দিনে ১৫০-২০০ টাকাতেও কর্মী মিলছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন কর্মীর কথায়, ‘‘পরিবারের আয় বাড়াতে মহিলারাও বাজি তৈরিতে সাহায্য করছেন।’’
দেবীপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় ক্ষেত্রপালও মনে করেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্যই ঝুঁকি জেনেও বাজি তৈরি করে কয়েকটি পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলব। কী ভাবে তাঁদের পাশে থাকা যায়, বিকল্প কাজের খোঁজ দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy