সরু হয়ে পড়ছে কলের জল। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
সিপিএম আমলে ২০ বছর, তৃণমূলের ১৫। তার পরেও পানীয় জলের যন্ত্রণা কাটেনি গুসকরা শহরে।
শহরের বেশির ভাগ বাসিন্দার অভিযোগ, পুরসভার পাইপ লাইনের সংযোগ থাকলেও, তাতে পানীয় জলের দেখা মেলে না। যদিও বা জল মেলে, তা সরু সুতোর মতো। ফলে, শীত হোক বা গরম জলের হাহাকার চলতেই থাকে। পুরভোটের আগে এই ক্ষোভকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিরোধীরা। যদিও অভিযোগ মানেনি শাসক দল।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ কর্মসূচিতে ২০০৩ সালে গুসকরা পুরসভা পানীয় জল প্রকল্পের জন্য আট কোটি টাকা পায়। ঠিক হয়, ওই প্রকল্পে বাড়ি-বাড়ি জল দেওয়া হবে। তার আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি উচ্চ জলাধার আর দু’টি সাব-মার্সিবলের মাধ্যমে শহরে ২৩৪টি বাড়িতে জল দেওয়া হত। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পুর এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলেই জানা যায়।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাইপলাইনে জল সরবরাহ প্রকল্প শুরু হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে ৭৮৭টি বাড়িতে জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়। ১১টি ওয়ার্ডে পাইপ লাইন বসে। বর্তমানে গুসকরা শহরে চারটে উচ্চ জলাধার ও ১১টি সাব-মার্সিবল পাম্প থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রাস্তাতেও পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে।
তবে সংযোগ থাকলেও জলের দেখা নেই, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাঁদের দাবি, পুরসভায় গিয়ে অভিযোগ জানালেও সুরাহা হয় না। সরমিনা বিবি, রাজু পালদের দাবি, ‘‘পুরসভা থেকে সকাল, দুপুর ও বিকেল, তিন বেলা পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল মেলে। তা-ও সব সময় আসে না। আবার অনেকদিন অল্প সময় জল আসে। ফলে, রাস্তার কলেও লম্বা লাইন পড়ে।’’ ঘণ্টাখানেক আগে থেকে কলের সামনে বালতি নামিয়ে লাইন দিতে হয়। এক বালতি ভরতে না ভরতে জল বন্ধ হয়ে যায়, দাবি শ্রাবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, লাল শর্মাদের। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘দু’বছর আগে পুরবোর্ডের বৈঠকের পরে, আমাকে জলের সংযোগ দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত ক’দিন পাইপ লাইন দিয়ে জল পড়েছে, গুনে বলা যাবে।’’ রাস্তার কল থেকেও নোংরা, শ্যাওলা মেশা জল পড়ে, দাবি শহরবাসীর একাংশের।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া, প্রাক্তন কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘শহরের জলের সমস্যা মেটাতে কেউ উদ্যোগী হয়নি। পাইপ লাইন তামাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ গুসকরার প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বিনোদ চৌধুরীরও দাবি, ‘‘কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে আগামী ২৫ বছরের জন্য মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে আমরা চলে যাওয়ার পরে, অপরিকল্পিত ভাবে জল সরবরাহ করা হয়েছে। মানুষের কাছে যেটুকু জল পৌঁছচ্ছে, তা-ও পানের অনুপযুক্ত। ল্যাবরেটরিতে জল পরীক্ষা করা উচিত।’’
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বাম আমলে শহরে একটা মাত্র উচ্চ জলাধার থেকে জল দেওয়া হত। তৃণমূলের সময়ে জলাধার বেড়ে হয় চারটে। এ ছাড়া, পাঁচটি সাব-মার্সিবলের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় বলেন, ‘‘পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের কথা ভেবেই উচ্চ জলাধার, সাব-মার্সিবল বসানো হয়।’’ বর্তমান পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য, তৃণমূল প্রার্থী কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে জলের সমস্যা রয়েছে। সেখানেও পাম্প বসছে। আরও নানা জায়গায় পাম্প বসানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy