সার দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের বাইরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। ভিতরে রয়েছে দালালেরা। উদ্বিগ্ন রোগীর পরিজনদের আস্থা জিততে পারলেই কেল্লা ফতে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী পৌঁছে যাবেন নার্সিংহোমে।
কখনও জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ‘ডেঙ্গি’ বলে রিপোর্ট দেওয়া, আবার কখনও বাড়তি টাকা দিতে না চাওয়ায় রোগীকে আটকে রাখা— অভিযোগের অন্ত নেই বর্ধমানের এই সব নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স-রাজ। নানা সময়েই রোগীর পরিজনেরা অভিযোগ করেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসার নাম করে অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা মাঝ রাস্তায় ভুল বুঝিয়ে নিয়ে চলে যান নার্সিংহোমে। বাধ্য করা হয় সেখানে রোগী ভর্তি করাতে।
বর্ধমানের খোসবাগান এলাকায় রয়েছে অসংখ্য নার্সিংহোম। নবাবহাট-কেশবগঞ্জ চটি চত্বরেও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নার্সিংহোম। উন্নত চিকিৎসার নামে অলিগলিতে গড়ে ওঠা এই সব নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা প্রতারণার অভিযোগ করেন প্রায়ই। প্রশাসন নানা নার্সিংহোমে হানা দিয়ে সেই সব অভিযোগের সারবত্তাও পেয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, সন্ধের পর থেকেই হাসপাতাল চত্বরে সক্রিয় হয়ে ওঠে একশ্রেণির দালালেরা। হাসপাতালে বিভিন্ন জায়গায় ‘দালালদের হাতে প্রতারিত হবেন না’ বলে প্রচার করা হলেও তা আটকানো যায় না। কয়েক দিন আগেই এক দিনে তিন রোগীকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ দালালেরা শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করায়। দালালকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন কর্মীরা। কিন্তু রোগীদের ফেরানো যায়নি। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সের উপরে আমাদের নজর রয়েছে বুঝতে পেরে রোগীকে কখনও সাধারণ গাড়িতে, কখনও টোটোয় করেও নিয়ে যায়। হাসপাতাল ছাড়ার সময়ে রোগীর পরিজনেরা স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছেন বলে লিখে দেওয়ায় আমরা কিছু করতেও পারি না।’’
নার্সিংহোমগুলির অবস্থা কী, তা অভিযোগের বহর দেখলেই বোঝা যায়। অভিযোগ ১: নার্সিংহোম না বসতবাড়ি, তা দেখে বোঝার উপায় নেই। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ মেনে বেশিরভাগ নার্সিংহোম চিকিৎসক, আরএমও (রেসিড্যান্ট মেডিক্যাল অফিসার)-র নামের তালিকা টাঙায় না। কোন পরিষেবার জন্য কত টাকা দিতে হবে, সে তালিকাও থাকে না। নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের নামের তালিকাও। ২) চিকিৎসা শেষে রোগীকে রসিদ দেওয়ার কথা। অধিকাংশ নার্সিংহোম তা মানে না। রসিদ চাইলে বাড়তি টাকা দাবি করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে মেয়ের চিকিৎসার জন্য বর্ধমানের এক নার্সিংহোমের দাবিমতো বাড়তি টাকা দিতে না পারায় ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়ার এক বাসিন্দা আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ উঠেছিল। ৩) বেশিরভাগ নার্সিংহোমেরই নিজস্ব প্যাথলজি সেন্টার রয়েছে। অনেক সময় সেখানে অতিরিক্ত টাকায় পরীক্ষা করাতে হয় কার্যত বাধ্য করা হয় রোগীদের। আরও অভিযোগ, ওই সব ল্যাবে চিকিৎসকদের সই করা ফাঁকা রিপোর্ট থাকে। সেখানেই রিপোর্ট লিখে রোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জেলার নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের কর্তা রঞ্জন ঘোষও বলেন, ‘‘অনেক রকম অভিযোগ ওঠে। সে সব নিয়ে আলোচনা করে আমরা ঠিক পথে চলার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ নার্সিংহোম ও অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, মানছে প্রশাসনও। বর্ধমানে কাজ করে যাওয়া প্রাক্তন এক আমলার কথায়, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালক ও নার্সিংহোম মালিকদের মধ্যে যোগসাজস রুখতে কড়া হয়েছিলাম। কিন্তু আটকাতে পারিনি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, ‘‘নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ মেলে। আমরাও পরিদর্শনে গিয়ে সেই সব অভিযোগের সারবত্তা পাই। কিছু-কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’’
সেই ব্যবস্থাই সার। খোসবাগানের ‘খোসগল্প’ চলতেই থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy