উৎকণ্ঠায় পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার গলসিতে। ছবি: কাজল মির্জা
পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলেকে অপহরণ করে ফোনে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বছর নয়ের ছেলেটি নিখোঁজ। পরিবারের দাবি, সেই রােত দফায়-দফায় টাকা চেয়ে ফোন এসেছে। প্রথমে সাত লক্ষ টাকা দাবি করা হলেও, পরে পাঁচ লক্ষ, শেষে তা তিন লক্ষে দাঁড়িয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলেটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) কল্যাণ সিংহরায়ের নেতৃত্বে তদন্তের দল তৈরি হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গলসির সাঁকো মেটেপাড়ার বাসিন্দা বুদ্ধদেব দোলুইয়ের ছোট ছেলে সন্দীপ স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বুধবার মনসাপুজো উপলক্ষে পাড়ায় উৎসব চলছিল। মনসা মন্দিরতলায় কচিকাঁচারা আনন্দ করছিল। কেউ-কেউ বাজি পোড়াচ্ছিল। মন্দিরের অদূরেই বাড়ি গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা সাঁকো পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বুদ্ধদেববাবুর। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ ঠাকুমা দুর্গাদেবীর কাছ থেকে দশ টাকা নিয়ে পাড়ার দোকানে বাজি কিনতে বেরোয় সন্দীপ। তার পরে থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। পরিবারের দাবি, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বুদ্ধদেববাবুর মোবাইলে একটি ফোন আসে। জানানো হয়, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে।
বুদ্ধদেববাবু জানান, তিনি তখন বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘পুজো উপলক্ষে পাড়ায় খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়েছিল। সন্ধ্যায় বাড়িতে দুই বন্ধু রাজীব ঘোষ ও অরূপ ঘোষের সঙ্গে গল্প করছিলাম। তখনই অজানা নম্বর থেকে ফোনটি আসে। ছেলেকে ফিরে পেতে সাত লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে। প্রথম ভেবেছিলাম, কেউ মজা করছে। তাই ফোন কেটে দিয়েছিলাম। পরে ফের ফোন করা হয়। তখন সন্দেহ হয়।’’ রাজীববাবুরা জানান, ফোনে তাঁরা কথা বলতে চাইলে, ‘অন্য প্রান্ত’ রাজি হয়নি। পুলিশে খবর দিলে শিশুটিকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সাঁকো পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ আলি মোল্লা বলেন, “রাতে ঘটনার কথা শুনেই পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনও খোঁজ মেলেনি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহরণের মামলা দায়ের হয়েছে। যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, সেটির সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। এক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাঁচ বার ফোন এসেছে পরিজনদের কাছে। প্রথমে মুক্তিপণ সাত লক্ষ টাকা চাওয়া হলেও, পরে পাঁচ লক্ষ ও শেষে তিন লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর ফোন নম্বরটি বন্ধ রয়েছে বলে পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।
বুদ্ধদেববাবুর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবীর অভিযোগ, “প্রথমে আমার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। পরে আমি ফোনটা নিয়ে কথা বলি। এক জনই বাংলায় গলা বিকৃত করে কথা বলছিল। ছেলের জন্য ৩৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন লক্ষ টাকা চায়। ফোনে কাকুতি-মিনতি করি। তখন ওই দুষ্কৃতী বলে, ‘এখন মদ খাচ্ছি, পরে ফোন করব’। তার পরে আর কোনও ফোন আসেনি।’’
খড়ের চালের দু’কামরার মাটির বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে বাস বুদ্ধদেববাবুর। তিনি ও তাঁর স্ত্রী খেতমজুরের কাজ করেন। সান্ত্বনাদেবীর দাবি, ‘‘আমাদের অত টাকা নেই। সব সম্পত্তি বিক্রি করলেও এক লক্ষ টাকা হবে না। কোথা থেকে থেকে দেব?’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে মনসাপুজোর অনুষ্ঠান বাতিল করে, খোঁজাখুঁজি শুরু করেন প্রতিবেশীরা। বাড়ির কাছে সেচখাল-সহ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পুকুর, ঝোপ-জঙ্গলে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু কোথাও বালকের হদিস মেলেনি।
প্রতিবেশী অজয় মাঝি, হারাধন দোলুইয়েরা বলেন, ‘‘মাঠে কাজ করে যাঁদের সংসার চলে, তাঁদের ছেলেকে অপহরণ কেন করা হল, বুঝতে পারছি না! ওঁদের সঙ্গে কারও শত্রুতা কথাও আমাদেরর জানা নেই।” গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাসুদেব চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘বুদ্ধদেব খুব সাদামাটা ছেলে। রাজনৈতিক কোনও শত্রুতা রয়েছে বলে মনে হয় না।’’ পুলিশের অনুমান, পুজোর অনুষ্ঠান চলাকালীন বহিরাগত কারও পক্ষে এলাকায় ঢুকে অপহরণ করা মুশকিলের। পরিবারটির যা আর্থিক অবস্থা, তাতে বাইরের কোনও দল এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। কোনও পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঠাকুমা দুর্গাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘কেন যে বাজি কেনার টাকা দিলাম! না দিলে ছেলেটা বেরোত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy