প্রতীকী ছবি।
কোভিড টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও লক্ষাধিক মানুষ তা নেননি! এমনই তথ্য উঠে এসেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানে। কেন এই পরিস্থিতি, তা জানতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার আবেদন জানিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারও চালানোর কথাও জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রকের কো-উইন ড্যাশবোর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমানে ১৮,৯৪,৬০৯ জনকে কোভিড টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন, ৮,৯১,১২৭ জন। পশ্চিম বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, “দ্বিতীয় ডোজ়ের সময় হয়ে গেলেও, কোভিড টিকা নেননি প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার জন।” তাঁর সংযোজন: “কোভিড এখনও নির্মূল হয়নি। তাই প্রত্যেকেরই দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া উচিত।”
এই পরিস্থিতিতে আশাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি পাঠিয়ে কারা টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় নেননি, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। একান্তই ওই ব্যক্তিরা টিকা কেন্দ্রে না এলে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে টিকা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আশাকর্মীদের সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি কারণ দেখা যাচ্ছে— প্রথমত, বাইরে থেকে এই শহরে এসে অনেকেই টিকা নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন তাঁরা শহরে নেই। দ্বিতীয়ত, এই শহরেরই বাসিন্দা অনেকে এখানে টিকা নিয়েছেন, যাঁরা কর্মসূত্রে শহরের বাইরে চলে গিয়েছেন। তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে, কোভিড সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখী। তাই অনেকের মধ্যেই একটা ‘নিশ্চিন্ত’ ভাব দেখা যাচ্ছে। তাই অনেকেই দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ থেকে বরাকর রুটের বাসকর্মী মহম্মদ জামিরুদ্দিনের গত ২৪ অক্টোবর কোভিড টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনও তা নেননি। জামিরুদ্দিন বলেন, “সময় করে উঠতে পারিনি। নিয়ে নেব।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পরিবহণকর্মীদের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ‘আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “প্রত্যেককে দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। না হলে, প্রয়োজনে বাসে ডিউটি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি, কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরের ঋত্বিক পাল জানান, তিনি কোভ্যাক্সিন নিয়েছিলেন। জুলাইয়ে তাঁর কোভিডের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ঋত্বিক বৃহস্পতিবার বলেন, “প্রথম দিকে টিকা মজুত না থাকায় তা পাইনি। পরে, কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আর তা নেওয়া হয়নি।” ওই এলাকারই অতুল বাউড়ি জানান, তিনি কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় নিলেও দ্বিতীয় ডোজ় নেননি। তাঁরও জুলাইয়ে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার তারিখ ছিল। তিনি বলেন, “প্রথম দিকে টিকা পাইনি। পরে, আর কাজের কারণে টিকাকেন্দ্রে যাওয়া হয়নি।”
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, জেলায় এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত সংখ্যায় টিকার ডোজ় মজুত রয়েছে। নিতে হচ্ছে না কুপনও। টিকাকেন্দ্রে গেলেই টিকা মিলবে। কিন্তু তার পরেও, টিকাকেন্দ্রগুলিতে লোকজন সে ভাবে আসছেন না। সিএমওএইচ জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রবীণ নাগরিকদের অনেকের ক্ষেত্রেই বাড়ি থেকে বেরনোটা সমস্যার। আশাকর্মীদের তাঁদের নামের একটি আলাদা তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এই কাজে যোগ দিয়েছে আসানসোল পুরসভাও। আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, সময় মতো দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার আবেদন জানিয়ে পুরসভা সচেতনতা অভিযান চালাচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে’র (আইএমএ) আসানসোল শাখার সভাপতি শ্যামল সান্যালের আর্জি, “কোভিডের দ্বিতীয় ডোজ় না নেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটা চলতে থাকলে, নিজের জন্য তো বটেই, পরিবার ও সমাজের জন্যও বিপদ ডেকে আনা হবে। দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া দরকার সবার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy