Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Katwa

রাস্তার অভাবে অধরা শহরের সুযোগ-সুবিধা

কাটোয়া-আজিমগঞ্জ ও কাটোয়া-আহমেদপুর রেললাইনের অদূরেই রয়েছে গ্রাম দু’টি। গ্রাম লাগোয়া স্টেশনের নাম নবগ্রাম-কাঁকুরহাটি হল্ট।

রেলসেতুতে লাইনের পাশে স্ল্যাবের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় নবগ্রাম, কাঁকুরহাটির ছাত্রছাত্রী-সব সব বাসিন্দাদের। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

রেলসেতুতে লাইনের পাশে স্ল্যাবের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় নবগ্রাম, কাঁকুরহাটির ছাত্রছাত্রী-সব সব বাসিন্দাদের। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রণব দেবনাথ
কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:০৩
Share: Save:

শহর থেকে দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। কিন্তু শহরের কোনও ছোঁয়া লাগেনি এলাকায়। কারণ, যাতায়াতের রাস্তাই তৈরি হয়নি দুই গ্রামে। কাটোয়া শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থেকেও তাই শিক্ষা বা চিকিৎসার মতো নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে হয় অনেক কষ্ট করে, অভিযোগ পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের নবগ্রাম ও কাঁকুরহাটির বাসিন্দাদের।

অজয়ে ঘেরা ওই দুই গ্রামে হাজার পাঁচেক মানুষের বাস। কাটোয়া-আজিমগঞ্জ ও কাটোয়া-আহমেদপুর রেললাইনের অদূরেই রয়েছে গ্রাম দু’টি। গ্রাম লাগোয়া স্টেশনের নাম নবগ্রাম-কাঁকুরহাটি হল্ট। গ্রামের ভিতরে পাড়ায়-পাড়ায় কাঁচা-পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাইরে যাতায়াতের কোনও মূল রাস্তা নেই। ফলে, রেললাইন ঘেঁষে যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। অজয়ের উপরে রেলসেতুতে লাইনের পাশের স্ল্যাব দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ তাঁদের।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, রাস্তার দাবিতে বহু বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন করা হয়েছে। আশ্বাসও মিললেও কাজ হয়নি। রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোটের প্রচারে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ভোট মিটে গেলে কারও কোনও উদ্যোগ নজরে পড়েনি। ২০১১ সালে রেল কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখায় অজয়ে নতুন সেতু তৈরি করা শুরু করলে বাসিন্দারা সেতুতে চলাচলের মতো রাস্তা তৈরির দাবি জানান। কিন্তু তা-ও হয়নি। এখন কাটোয়া-আহমেদপুর লাইনে ওই অংশে বিদ্যুদয়নের কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সে কাজে বাধা দিয়ে রাস্তার দাবি জানান বাসিন্দারা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন রেলের কাটোয়ার আধিকারিকেরা।

বাসিন্দারা জানান, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। কিন্তু, যাতায়াতের কোনও মূল রাস্তা না থাকায় চূড়ান্ত দুর্ভোগ হয়। রেললাইনের পাশে স্ল্যাব ধরে যাতায়াত করতে গিয়ে মাঝেমাঝে দুর্ঘটনাও ঘটে। নবগ্রামের বরুণ পাল, উত্তম পালেরা বলেন, ‘‘প্রায়ই আমাদের নানা প্রয়োজনে কাটোয়ায় যেতে হয়। শহর ঢিল ছোড়া দূরত্বে, কিন্তু রাস্তা না থাকায় আমরা দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে রয়েছি।’’ তাঁদের অভিযোগ, কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। প্রসূতিদের নিয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়তে হয়। স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত অভিভাবকেরা চিন্তায় থাকেন। এমনকি, গ্রামের ছেলেমেয়েদের বিয়ের সম্বন্ধও ভেস্তে যায় যোগাযোগের অব্যবস্থা জন্য, দাবি তাঁদের। কাঁকুরহাটি গ্রামের বুদ্ধদেব ঘোষ, সন্ন্যাসী মাঝিরা বলেন, ‘‘রাস্তা না থাকায় বর্ষায় দুর্ভোগ বেশি হয়।’’

কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ অবশ্য বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই ওই দুই গ্রামে রাস্তা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ কেতুগ্রাম ২ বিডিও অরিজিৎ রায় বলেন, ‘‘ওই দুই গ্রামে রাস্তা করা নিয়ে কী সমস্যা, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্লর আশ্বাস, সমস্যা মেটাতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে কথা বলা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Katwa Development Ketugram Nabagram Roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE