বাঁ দিক থেকে, লাউদোহায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায়। উখড়ায় রোড-শো। জামুড়িয়ার কেন্দায় লিট্টি চেখে দেখছেন অভিষেক। ছবি: বিকাশ মশান ও নিজস্ব চিত্র
লাউদোহায় জনসভা, উখড়ায় রোড-শো এবং জামুড়িয়ার কেন্দায় লিট্টি-চোখা খাওয়া— বুধবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি ছিল এমনই। জনসভায় জনতার উৎসাহ দেখা যায়। পাশাপাশি, লিট্টি-চোখা খাওয়ার কর্মসূচির নেপথ্যে পশ্চিম বর্ধমানের হিন্দিভাষী ভোটই নজরে ছিল কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। যদিও, এ জল্পনায় আমল দেয়নি তৃণমূল।
এ দিন বিকেলে লাউদোহায় জনসভা করেন অভিষেক। দুপুর ২টো থেকে তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকেরা সভায় আসতে শুরু করেন। মহিলাদের অনেকেই তৃণমূলের প্রতীক ছাপ দেওয়া শাড়ি পরে সভায় আসেন। ঢাক, ঢোল, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে আসেন অনেকে। অভিষেককে স্বাগত জানাতে নীল-সাদা রঙের বেলুন নিয়েও হাজির হয়েছিলেন কেউ কেউ। সভায় উপস্থিত লক্ষ্মী সিংহ, জবা আঁকুড়েরা বলেন, “অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল অভিষেককে সামনে থেকে দেখব। তাই গরম উপেক্ষা করেও সভায় এসেছি।” সভায় নিরাপত্তার ব্যাপক কড়াকড়ি ছিল। সভা শেষে পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়। কড়া পুলিশি পাহারায় নির্বিঘ্নে ভোটদান পর্ব হয়।
উখড়ায় রোড-শো করেন অভিষেক। শেষে জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়ি ফুটবল মাঠে লিট্টি-চোখা খেতে আসেন অভিষেক। সেখানে তিনি বলেন, “আমি এখানে লিট্টি-চোকা খেতে এসেছি। তাই এত বড় আয়োজন না করলেও হত।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, সাত হাজার মানুষের জন্য রানিগঞ্জের একটি ক্যাটারিং সংস্থার ৩০ জন মিলে ১৫ হাজার লিট্টি, চোখা ও চাটনি তৈরি করেছিলেন। বন্ধ থাকাউৎকলমণি পণ্ডিত গোপবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়র ক্লাসঘরগুলিতে এ সব তৈরি করা হয়েছে। ফুটবল মাঠে ২০টি স্টল থেকে লিট্টি, চোখা, চাটনি বিলির ব্যবস্থা করা হয়। নরেশ মহারাজ ও রামদেব যাদব নামে দু’জন জানান, তাঁরা মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করেছেন।
কিন্তু লিট্টি-চোখা খাওয়ার কর্মসূচি কেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশ জানাচ্ছে, আসানসোল লোকসভা এলাকায় হিন্দিভাষী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। আসানসোল পুরনিগম এলাকায় এই সংখ্যাটা প্রায় ৩২ শতাংশ। ২০২২-এর লোকসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল জিতলেও, পুরনিগম এলাকার ৫৬টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। বিশেষ সূত্রে পর্যবেক্ষণ: ওই ওয়ার্ডগুলিতে হিন্দিভাষী ভোটারদের সংখ্যা প্রাধান্য রয়েছে। পাশাপাশি, খনি এলাকায় কেন্দা, পরাশিয়া-সহ প্রায় ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকায় হিন্দিভাষীদের প্রাধান্য রয়েছে।— এ দিকে তাকিয়েই কি এমন কর্মসূচি, প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল।
তৃণমূলের হিন্দি প্রকোষ্ঠের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি সিন্টু ভুঁইয়ার দাবি, “লিট্টি-চোখা হিন্দিভাষীদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। অভিষেক হিন্দিভাষীদের সাংস্কৃতিক, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আগ্রহী। এই সংস্কৃতির সঙ্গে উনি যে একাত্ম, এ দিনের কর্মসূচি তার প্রমাণ। তবে আমরা হিন্দিভাষী বা বাংলাভাষী, এমন ভাগ করি না। ওটা বিজেপি করে।” বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে’র বক্তব্য, “লিট্টি-চোখা খেয়ে হিন্দিভাষীদের মন জেতা যাবে না। কারণ হিন্দিভাষীরা জানেন, তৃণমূল তোষণের রাজনীতি করে। ওরা জাতীয়তাবাদের বিরোধী।” পাশাপাশি, বিজেপির অভিযোগ, গত ১৫ মার্চ ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম ভাষার তালিকা থেকে হিন্দি, উর্দু ও সাঁওতালিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের আবার তোপ, “খাদ্যাভ্যাস সাংবিধানিক অধিকার। তবে অভিষেকের পেট দুর্নীতিতে ভরে আছে। ফলে, লিট্টি-চোখা হজম হওয়া মুশকিল।” বিরোধীদের এ সব মন্তব্যে আমল দেয়নি তৃণমূল। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “অভিষেক ও তাঁর জনপ্রিয়তা বিরোধীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। তাই ওঁরা দিশাহারা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy