পরিদর্শনে কমিটির সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালে ঢোকার পর থেকেই চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ শুনছিলেন। হাজিরা খাতা দেখে একেবারে চক্ষু চড়কগাছ।
বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধি দলের নজরে পড়ে ওই খাতা। সেখানে এক চিকিৎসক-শিক্ষকের হাজিরায় লাল কালির দাগ দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। পাল্টা সেখানে ওই চিকিৎসক লিখে দিয়েছিলেন, ‘অধ্যক্ষ, আপনি ক’দিন হাসপাতালে থাকেন যে আমায় গরহাজির দেখাচ্ছেন?’— বাক্যহারা হয়ে যান নির্মল মাজির নেতৃত্বে ওই দলের সদস্যেরা। কলেজের পড়ুয়ারাও তাঁদের কাছে অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষকে সপ্তাহে দু’দিনের বেশি পাওয়া যায় না।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিনিধি দলটির ক্ষোভের মুখে পড়েন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক। দলের নেতৃত্বে থাকা নির্মলবাবু ভৎসর্নার সুরে বলেন, ‘‘আপনি দু’দিন কলেজে থাকবেন। বাকি চার দিন স্বাস্থ্য ভবন দেখাবেন। এ ভাবে চললে হবে না।’’ অধ্যক্ষ যদিও পরে দাবি করেন, ‘‘আমি কলেজে থাকি কি না, সেটা সবাই দেখতে পায়।’’
হাসপাতালের শল্য বিভাগের ঘরের বৈঠকে অধ্যক্ষ ছাড়াও ওই বিভাগের অন্য চিকিৎসকদের গরহাজিরার প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ, বিভাগের ২২ চিকিৎসকই নির্দিষ্ঠ রুটিন মেনে হাসপাতালে আসেন না। এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক মাসে এক বার কলকাতা থেকে বর্ধমান আসেন বলেও শোনা যায়। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘সরকারের কাছ থেকে মোটা বেতন নিচ্ছেন, অথচ হাসপাতালে না থেকে কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে থাকবেন, তা হবে না। প্রতিদিন সকাল-সন্ধে দু’বেলা করে শিক্ষক-চিকিৎসকদের হাসপাতালে এসে খোঁজ খবর নিতে হবে।”
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শিশু বিভাগ গিয়ে পরিদর্শন শুরু করে ওই কমিটি। এসএনসিইউ, সিসিইউ ঘুরে দেখার পরে দলের সদস্যেরা জানান, তাঁদের মনে হয়েছে সিসিইউতে যে ১২টি শয্যা রয়েছে তা বাড়ানো দরকার। শিশু ওয়ার্ডে একটি শয্যায় দু’জন রোগী রয়েছে দেখে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেন। বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের কেউ সন্তোষ প্রকাশ করেন, আবার আসানসোলের অনিতা দাস, কিংবা মেমারির সুচাঁদ ঘোষেরা জানান, সকাল ১০টা থেকে বহির্বিভাগে বসে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পাননি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্র ওই কমিটির কাছে অভিযোগ করেন, “আমার এক পরিচিতের পায়ে প্লেট বসানো হয়েছিল একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। এখন তিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্লেটের স্ক্রু খুলতে চান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তিও নিয়েছে শনিবার। কিন্তু এখন বলছে যেখান থেকে প্লেট বসিয়েছেন, সেখানে গিয়ে খুলে নিন।” বিষয়টি শুনে ১৩ জনের ওই দলের অন্যতম সদস্য, সিপিএম বিধায়ক তন্ময় সরকার রেগে বলেন, ‘‘এ আবার কী! চিকিৎসক মারা গেলে কী পায়ের স্ক্রু খোলা যাবে না?” থতমত খেয়ে হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “কোন চিকিৎসক এ কথা বলল দেখে নিচ্ছি। আর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হবে।”
আরও জানা যায়, এ দিন বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি হাসপাতাল পরিদর্শনে আসছে জানার পরেও শল্য বিভাগের ১৫ জন চিকিৎসক ছিলেন না। কমিটির এক সদস্য বলেই ফেললেন, ‘‘হাসপাতালে কী রকম পরিষেবা পাচ্ছে, ভালই বুঝছি!’ নির্মলবাবু অধ্যক্ষকে ওই সব চিকিৎসককে ‘শো-কজ’ করার পরামর্শ দেন। পরে নির্মলবাবু বলেন, “বেশ কিছু শিক্ষক-চিকিৎসক হাসপাতালে গরহাজির থাকেন। তাঁদেরকে সতর্কীকরণের প্রয়োজন আছে। ওই সব চিকিৎসকের নাম আমরা রিপোর্টে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ঠ দফতরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানাব।” তন্ময়বাবু বলেন, “সরকারি সাহায্য পাওয়ার পরেও ঠিকমত পরিষেবা হাসপাতালগুলি দিতে পাচ্ছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখতে এসেছি। সেই পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটলেই আমরা চেপে ধরব।” হাসপাতাল মনিটরিং কমিটির সদস্য তথা কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিকের দাবি, ‘‘রোগীদের ভাল পরিষেবা দেওয়াটাই প্রধান কাজ। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy