বছর খানেক আগে ঠিক হয়েছিল, কাটোয়া ও কালনা মহকুমা জুড়ে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার পাড় ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করবে কলকাতা পোর্ট। বারবার বৈঠক হয়। সেচ দফতর কোথায় কী কাজ করতে হবে তার বিশদ রিপোর্ট পাঠায় অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ দফতরে। তার পরেও ওই কাজ আদৌ হবে কি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী ভাগীরথীর ওই পাড়ে কলকাতা পোর্ট ছাড়া অন্য কোনও সংস্থা কাজও করতে পারবে না।
সেচ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “পাকাপাকি ভাবে ভাঙন রোধ নিয়ে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, বন্যা ও ভাঙন রোধ নিয়ে মাসখানেক আগে কানাইনাটশালের সেচ বাংলোয় ছয় জেলা নিয়ে একটি বৈঠক করেন শুভেন্দুবাবু। সেখানে তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে কাটোয়া ও কালনায় ভাঙন রোধের কাজ করা যেতে পারে। প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে সেচ দফতর অগ্রদ্বীপ, পূর্বস্থলীর ছাতনি, চর কমলনগর, ঝাউডাঙা, ন’পাড়া ও কাঠুরিয়ায় অস্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধের কাজ করবে বলেও ঠিক হয়।
সেচ দফতরের ভাগীরথী ডিভিশন (বর্ধমান) সূত্রে জানা যায়, ওই সব এলাকায় ভাঙন রোধের জন্যে বাঁশ আর নাইলন দড়ি দিয়ে খাঁচা তৈরি করা হবে। তার ভিতর বোল্ডার দিয়ে ভাগীরথীতে ফেলে জলের গতিবেগ কমিয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ভাঙন রোধে অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে। ছ’টি জায়গাতেই গড়ে সাড়ে সাত হাজার খাঁচা ফেলবে সেচ দফতর। দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান ২) ললিত সিংহ বলেন, “আশা করছি, এ মাসের শেষেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর সল্টলেকের জলসম্পদ ভবনে আইআইটি (মুম্বই), আইআইটি (চেন্নাই)-এর সঙ্গে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট, অন্তর্দেশীয় জলপথ, রাজ্যের সেচ দফতরের আলোচনা হয়। জানা যায়, আইআইটির অধ্যাপকদের নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের ওই সংস্থার কর্তারা এক বছর আগে ২৫ থেকে ২৯ জুন মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণা পর্যন্ত ভাগীরথী ও হুগলি নদীর উপর কোথায় কোথায় ভাঙনের সমস্যা রয়েছে তা সরেজমিনে দেখেন। ওই দিনের আলোচনায় তাঁরা জানান, ‘ভয়ঙ্কর’ অবস্থায় রয়েছে এমন এলাকার দিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়াও ঘন জনবসতি, শহরাঞ্চল, বড় রাস্তা, বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিকেও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৩টি জায়গার ১২৯.৫৭২ কিলোমিটার ভাঙনের মুখে। তা রক্ষা করতে প্রায় হাজার কোটি টাকা দরকার। তার মধ্যে ১৭৭.৭০ কোটি টাকা সরকার ছেড়ে দিয়েছে। যদিও সেচ কর্তাদের দাবি, ওই টাকা এখনও কাটোয়া ও কালনা এলাকার জন্যে পৌঁছয়নি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাঙন রোধে পাড় বাঁধানো হবে। বাঁশের খাঁচা ফেলে জলের গতি কমানোর সঙ্গে পাড়ে ‘বোল্ডার পিচিং’ করা হবে। ছোট ছোট ‘স্পার’ করে গতিমুখ পরিবর্তন করে ভাঙন রোধ করা হবে। ম্যানগ্রোভ বা ভার্টিভার গাছ বসিয়ে ভাঙন রোধে প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভাগীরথী ভাঙন শুরু হয় পাড়ের ১০ থেকে ২১ মিটার নীচ থেকে। আর ভার্টিভার গাছের শিকড় ৬ মিটার পর্যন্ত নীচে নামে। ফলে ‘বিপজ্জনক’ এলাকায় ওই গাছ কোনও কাজ করবে না। তার বদলে জিও ব্যাগ, বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এইডিপিই (হাই-ডেনসিটি পলিথিলিন) ব্যাগ বেশি কার্যকর।
সেচ দফতরের এক কর্তার দাবি, “একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার একাংশ সেচ দফতর কাজ করবে। বাকি অংশের কাজ কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy