ইউআইটি-তে অশান্তির পরে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের একাংশের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’-তে (ইউআইটি)। আহত হন দুই শিক্ষক ও এক অশিক্ষক কর্মচারী। এক শিক্ষিকার সঙ্গেও অভব্য আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ। বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেছেন দু’পক্ষই।
ইউআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, নানা কারণে মতবিরোধ হওয়ার জেরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পৃথক গোষ্ঠী হয়ে গিয়েছে। তার জেরে এই গোলমাল। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে স্থানীয় এক তৃণমূল কাউন্সিলরের। কলেজের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মিত্রের দাবি, ‘‘বার বার কলেজে অশান্তি তৈরি করছেন কর্মীদের একাংশ। তাঁদের মদত দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা তথা বর্ধমান পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ তাঁর দাবি, আগেও এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শ্যামাপ্রসাদ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ যায় ক্যাম্পাসে। ডিএসপি (ট্র্যাফিক ২) রাকেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। তদন্ত চলছে।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের মিটিংয়ে বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার রিপোর্ট পেলে, সে মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ইউআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে দুই কর্মী অমিয় ঘোষ ও প্রীতম দে শিক্ষক অপূর্ব ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম সরকারকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। ‘মারধর’ করা হয় কমলকৃষ্ণ দাস নামে অ্যাকাউন্ট বিভাগের এক কর্মীকে। শিক্ষিকা কস্তুরি ঘোষকে গালিগালাজ করা হয় বলেও অভিযোগ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় তাঁদের। পরে, বর্ধমান থানায় আলাদা আলাদা অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।
কেন এই ঝামেলা? ইউআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মে মাসে এক সাফাই কর্মীকে অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেন্ড করেন অধ্যক্ষ। এক জনকে নিয়োগও করা হয়। এই দুটো বিষয় নিয়েই বিরোধিতা করেন কর্মীদের একাংশ। অধ্যক্ষের অভিযোগ, সে সময় শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন লোক মিলে হামলা করে। হুমকি দিয়ে ওই দিন বিকেলেই জোর করে ‘সাসপেনশন অর্ডার’ তুলে নিতে বাধ্য করা হয়, তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বর্ধমান থানায় অভিযোগও হয়। আবার অধ্যক্ষ নিয়মিত কলেজে আসেন না, তাই কাজে অসুবিধা হয় বলেও কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। যদিও অধ্যক্ষের দাবি, ছুটিতে রয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে যাঁরা পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে পারেননি, তাঁদের জন্য অনলাইনে বৈঠক হয়। এক মাসের মধ্যে টাকা দেওয়ার মুচলেকা দিলে, পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রসঙ্গে কলেজের কিছু কর্মীর সঙ্গে শিক্ষকদের গোলমাল শুরু হয়। অপূর্ব ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম সরকার এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ দিন তাঁরা কলেজে ঢুকতেই মারধর করা, জামা ছেঁড়া হয় বলে অভিযোগ। পড়ুয়ারাও দু’ভাগ হয়ে গোলমালে জড়ায়। পরে দু’পক্ষ থানায় অভিযোগ জানান।
পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘স্কলারশিপের টাকা না আসায় বিহার বোর্ডের কিছু পড়ুয়া ফর্ম ফিলআপ করতে পারেননি। সোমবার পরীক্ষা। তাই অনলাইন বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়। কলেজে ঢুকতেই কেন এই সিদ্ধান্ত সে প্রশ্ন তুলে মারধর করা হয়।’’ অভিযুক্ত কর্মী অমিয় ঘোষের দাবি, ‘‘সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে অনলাইনে মিটিং করে কলেজ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। শিক্ষকদের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলতে গেলে, তর্কাতর্কি বাধে। পড়ুয়ারাও জড়ায়। মারধর, গাড়ি ভাঙচুর করাও হয়।’’ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্ররোচনা দেওয়া, হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ করেন তিনি।
শ্যামাপ্রসাদের দাবি, ‘‘অধ্যক্ষ নিজের কাজ করেন না। গত মাসেও উনি আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন। কলেজের পরিবেশ ঠিক নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করব।’’
শিক্ষাঙ্গনে দলের নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘উনি শিক্ষাকর্মীদের সংগঠনের নেতা। তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতেই পারেন। বৃহস্পতিবার কী হয়েছে, খোঁজ নিতে হবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘শিক্ষাঙ্গনকে রঙ্গমঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে তৃণমূল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy