নানা অভাব-অভিযোগের পরেও কালনা মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের ভিড়।
এলাকায় মহিলা কলেজ চাই।
গত পুরভোটে এই বিষয়কে সামনে রেখেই লড়াই করেছিল তত্কালীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। তারপর ভোটে জিতে পাঁচ বছর পুরসভা শাসন করে তারা। দলবদলে কংগ্রেসের একের পর এক কাউন্সিলর যোগ দেন তৃণমূলে। দেখতে দেখতে পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে। অথচ কালনা পুর এলাকায় এখনও মহিলা কলেজ হয়নি। আশপাশের গ্রম তো বটেই, পাশাপাশি জেলাগুলোর একাংশের ভরসাও সেই কালনা কলেজ।
অথচ প্রতি বার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর থেকেই কালনার আশপাশের গ্রাম থেকে বহু পড়ুয়া শহরে পড়ার আর্জি নিয়ে ফর্ম তুলতে লাইন দেয়। টিউশন, যাতায়াতের সুবিধা, বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিতি সব দিক থেকেই শহরে আসার সুবিধা নিতে চায় তারা। তার উপর শহরের জনসংখ্যাও উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এ দিকে কলেজের আসন সংখ্যা না বাড়ায় প্রতি বছরই স্বপ্ন ভাঙে অনেক পড়ুয়ার। কালনা কলেজে ভর্তির জন্য কালনা ছাড়াও নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি থেকে পড়ুয়ারা এসে আবেদন করে। সবথেকে বেশি প্রতিযোগিতা থাকে অনার্স বিষয়গুলিতে। ফলে এলাকার অনেকেই ভর্তির সুযোগ পান না। দূরে পড়তে যেতে হবে বলে লেখাপড়া বন্ধও হয়ে যায় অনেকের। এই পরিস্থিতিতে কালনায় একটি মহিলা কলেজের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। অথচ গত পুরভোটে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আশ্বাসই রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বাংলা অনার্সের ছাত্রী কল্যাণী মজুমদারের বাড়ি কালনা ২ ব্লকে। কিন্তু তিনি নদিয়ার একটি কলেজে পড়তে যান। তাঁর আক্ষেপ, “কালনা কলেজে ভর্তি হতে না পেরে বাধ্য হয়ে নদিয়ার কলেজে ভর্তি হয়েছি। শহরে একটি মহিলা কলেজ থাকলে হয়ত আমার মতো সাধারণ পরিবারের মেয়েদের অন্য জেলায় পড়তে যেতে হত না।” স্থানীয় বাসিন্দা যাদব পণ্ডিতের দাবি, মহিলা কলেজ তৈরি হলে কালনা কলেজের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। খরচের কথা ভেবে যাঁরা বাইরে পড়তে যেতে পারেন না তাঁরাও এলাকার কলেজে পড়ার সুযোগ পাবেন।”
কিন্তু নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি থাকার পরেও কেন কলেজ হল না শহরে? কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুণ্ডু বলেন, “শহরে কলেজ তৈরির ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হল জমি। কলেজ গড়তে একলপ্তে অনেকটা জমি দরকার।” তাঁর দাবি, “ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে কয়েক বছর আগো কালনা ২ ব্লকের তেহাট্টা গ্রামে সদানন্দ কলেজ তৈরি হয়েছে। কলেজটি সরকারি অনুদানও পাচ্ছে। বিধায়ক তহবিল থেকেও ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য করা হয়েছে।” যদিও শহরবাসীর দাবি, কলেজটি কালনা পুর এলাকায় নয়। তার উপর শুধু পাস কোর্স পড়ানো হয় কলেজটিতে। ফলে প্রতি বছরই স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের একাংশ নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়।
পাঁচ বছরেও মহিলা কলেজ হয়নি। ভরসা শহরের এই কলেজ।
শুধু কলেজ নয়, পুর এলাকায় স্কুলগুলিতেও পরিকাঠামো অভাব রয়েছে। কালনা পুর এলাকায় মোট ৮টি বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু কোথাও ছাত্রাবাস নেই। ফলে শহরের বাইরের পড়ুয়ারা মুশকিলে পড়েন। অনেক স্কুলে খেলার মাঠও নেই। কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ বলেন, “ছাত্রাবাস থাকলে অনেক সুবিধা। দূর থেকে অনেক মেধাবী ছাত্র এসে পড়াশোনা করতে পারেন।” তাঁর খেদ, সঠিক সুযোগের অভাবে গত দু’দশক ধরে জয়েন্ট পরীক্ষায় কালনা শহরের ছাত্রছাত্রীরা ভাল ফল করতে পারেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও পুর কর্তৃপক্ষের নজরের অভাব রয়েছে। আর্বজনায় প্রায় বুজে যাওয়া নিকাশি নালা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। পুকুর মজে মশা-মাছির উপদ্রবও লেগে থাকে। ফলে মশাবাহিত রোগের সম্ভাবনা রয়েই যায়। এলাকার গৃহবধূ বনানি মণ্ডলের অভিযোগ, “গরম পড়লে মশার উপদ্রব বাড়ে। তার উপর এক পশলা বৃষ্টি হলে তো কথায় নেই।” তাঁর দাবি, “পুরসভা থেকে মাঝে মধ্যে স্প্রে করা হলেও তার পরিমাণ যথেষ্ট নয়।” যদিও পুরপ্রধানের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের কাছে ‘জল ধর জল ভর’ প্রকল্পে কালনার পুকুরগুলি সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। পুরসভার তরফে পুকুরগুলির দাগ, খতিয়ান নম্বরও জানানো হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়েও শহরের বাসিন্দাদের বরাবরের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের দাবি, সরকারি হাসপাতালগুলিতে রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক পাওয়া দায়। মহকুমা হাসপাতালের দশাও একই। ফলে রাতবিরেতে কিছু হলে রেফার হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। শহরের বাসিন্দা রমাপদ চক্রবর্তীর ক্ষোভ, “বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ অথবা কলকাতার কোনও হাসপাতাল পর্যন্ত যে সমস্ত রোগী লড়াই চালাতে পারেন তাঁরা হয়ত বেঁচে যান। কিন্তু বাকিরা মারা যান।”
বিরোধী নেতাদেরও একই সুর। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কালনা মহকুমা হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেয়। বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডেও জানান, চিকিত্সা পরিকাঠামো নিয়ে পুরসভার উদাসীনতা এ বারের পুর নির্বাচনে তুলে ধরা হবে। একই কৌশল কংগ্রেসেরও। তবে পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর গোকুল বাইনের অবশ্য দাবি, শহরে জনবসতির তুলনায় সাফাই কর্মী কম রয়েছে। তবে তার মধ্যেই পুরসভা ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
কারা ঠিক বলছেন সে উত্তর দেবে ইভিএম মেশিনই।
(শেষ)
ছবি: মধুমিতা মজুমদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy