Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Stray Dogs

পোষ্যেরা আদরে, কষ্টে পথকুকুরেরা

দুর্গাপুর শহরে পোষ্যের তালিকায় সবথেকে বেশি রয়েছে কুকুর। কুকুরের মধ্যে যেমন বিদেশি প্রজাতির কুকুর আছে, তেমনই রয়েছে পথকুকুরও।

মঙ্গলবার ভোর ৪টেয় দুর্গাপুরের ডিসিএল মার্কেটে। ছবি: বিকাশ মশান

মঙ্গলবার ভোর ৪টেয় দুর্গাপুরের ডিসিএল মার্কেটে। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৮
Share: Save:

কনকনে ঠান্ডায় গরম পোশাকে আপাদমস্তক মুড়ে দিন কাটছে শিল্পাঞ্চলবাসীর। ঘন ঘন গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক তো আছেই! এই শীতে বাড়ির পোষ্যের জন্য বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন সেগুলির মালিকেরা। কিছু পশুপ্রেমী সংগঠন পথকুকুরদের পরিচর্যা করছেন। কিন্তু তার বাইরেও থেকে যাচ্ছে বহু পথকুকুর, যেগুলি সমস্যায় পড়েছে এই ঠান্ডায়।

দুর্গাপুর শহরে পোষ্যের তালিকায় সবথেকে বেশি রয়েছে কুকুর। কুকুরের মধ্যে যেমন বিদেশি প্রজাতির কুকুর আছে, তেমনই রয়েছে পথকুকুরও। একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডে প্রায় হাজার তিনেক বিদেশি পোষ্য কুকুর রয়েছে। এ ছাড়াও এই শহরের রাস্তায় প্রায় ২৫ হাজার কুকুর ঘুরে বেড়ায়। সেগুলি বেঁচে আছে মূলত এলাকার বাসিন্দাদের ভরসাতেই। এ ছাড়া এই শহরে বাড়িতে বিড়াল, পাখি প্রভৃতি পোষার চলও রয়েছে কম-বেশি।

অধিকাংশ পোষ্যের মালিক পোষ্যের খেয়াল রাখছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, শীতে পোষ্যের ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। পোষ্যেরা এমনিতে পোশাক পরতে চায় না। কিন্তু অনেকেই জোর করে গরম পোশাক পরিয়ে দেন। কারণ, বন্ধ ঘর থেকে খোলা বারান্দায় বেরিয়ে পড়লে সর্দি-ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। অনেকেই পোষ্যকে বিছানায় পাশে নিয়ে ঘুমোন। যেমন, বিধাননগরের বীরেশ্বর গুহ। তিনি বলেন, “এই ঠান্ডায় মেঝেয় থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে যে!” আবার অনেকের পোষ্য একা থাকতেই পছন্দ করে। যেমন, সিটি সেন্টার এলাকার শিউলি রায় বলেন, “কিছুতেই আমাদের সঙ্গে বিছানায় থাকতে চায় না আমাদের প্রিয় কুকুরটি। মেঝেয় আলাদা মোটা বিছানা করে শুইয়ে কম্বল চাপা দিয়ে দিই। তবে বিড়ালটিকে নিয়ে সমস্যা নেই। সেটি আমাদের সঙ্গেই থাকে।” তাঁরা জানান, প্রবল শীতে পোষ্যের যাতে ঠান্ডা না লাগে সে জন্য এই সময় সামান্য গরম খাবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ত্বক যাতে ভাল থাকে সে জন্য ‘অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট’ সমৃদ্ধ শাক-আনাজ খাওয়ানো হয়। তা ছাড়া পোষ্যকে বেশ কয়েক দিন পর পর স্নান করাতে হয়। বেনাচিতির কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর পোষা টিয়াটিকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে রাতে খাঁচাটি মুড়ে দেন মোটা চাদর দিয়ে।

এ দিকে, প্রবল ঠান্ডায় পথকুকুরদের কী হাল! এই শহরে বছরভর দেখা যায়,কয়েক জন পশুপ্রেমী আছেন, যাঁরা রাতে রান্না করা খাবার খাইয়ে থাকেন পথকুকুরদের। যেমন, ডিএসপি টাউনশিপের হস্টেল অ্যাভিনিউ এলাকার কয়েকটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদিকা অবন্তিকা শ্যাম রায়চৌধুরী। নিজে জটিল রোগে আক্রান্ত। কিছু দিন আগে ভিন্-রাজ্য থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফিরেছেন। এসেই আবার আগের মতো নেমে পড়েছেন পথ কুকুরদের সেবায়। রাতে খাবার দেওয়ার সঙ্গে যতটা পারছেন মোটা চটের বস্তা দিয়ে শোয়ার ও ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন তিনি। অবন্তিকা বলেন, “এই প্রবল ঠান্ডায় খুব খারাপ আছে ওরা। যেটুকুপারছি, করছি।”

এ দিকে, শহরে পথকুকুরদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে গত বছর থেকে ফের কুকুরের নির্বীজকরণ শুরু করেছে দুর্গাপুর পুরসভা। একই সঙ্গে কুকুরদের দেখভালের সুবিধার জন্য ভবিষ্যতে পুরসভায় প্রাণীদের জন্য পৃথক বিভাগ চালু করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে বলে জানান পুর-প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। পানাগড়ের পশুপ্রেমী সংস্থার সম্পাদক তথা ‘ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস’ (পূর্ব বর্ধমান)-এর সদস্য চন্দন গুঁই বলেন, “বস্তার ভিতরে খড়কুটো দিয়ে সেগুলি রাস্তার মোড়ে মোড়ে নামিয়ে রাখি। কুকুরেরা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে সেগুলির উপরে আশ্রয় নেয়।” তিনি জানান, তবে এর বাইরেও বহু কুকুর রয়েছে, যারা মানুষের নজরের বাইরে রয়ে যায়। সর্দি, ঠান্ডা লেগে তাদের অনেকেই কাবু হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Stray Dogs Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy