Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Tourism at Kalna

শহর জুড়ে স্থাপত্য, কিন্তু পর্যটক টানার উদ্যোগ কোথায়

বছর দেড়েক আগে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে ঠিক হয় পর্যটকদের সুবিধা দিতে বেশ কিছু বাড়িতে ‘হোম স্টে’ তৈরি করা হবে।

কালনার জোড়া মন্দির।

কালনার জোড়া মন্দির। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২৩
Share: Save:

শহরে ছড়িয়ে থাকা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে শীত পড়তেই ভিড় জমে ভ্রমণ পিপাসুদের। কিন্তু পর্যটকদের চাহিদা থাকলেও অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে অনেক নিদর্শন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, স্থাপত্য, সৌধের পাশে দোকান গড়ে এলাকার শিল্প, খাবার পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা যেতে পারে। ভাল থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয় না।

ভাগীরথীর পাড়ে বহু বছর আগে মাথা তুলেছিল এই শহর। ১০৮ শিবমন্দির, লালজি মন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির, গোপাল মন্দির, ভবাপাগলা মন্দির, মহাপ্রভু মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে চারশো বছরেরও পুরনো দাঁতনকাঠিতলার মসজিদ। কিছু নিদর্শন কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের নজরদারিতে থাকলেও অনেক স্থাপত্যই রয়ে গিয়েছে অযত্নে। জগন্নাথতলা এলাকায় বহু বছর ধরে রয়েছে টেরাকোটার কারুকাজ করা জোড়া শিবমন্দির। কথিত রয়েছে, বর্ধমানের মহারাজা চিত্রসেনের মৃত্যুর পরে দুই রানি ছঙ্গকুমারী ও ইন্দ্রকুমারী মন্দির দু’টি তৈরি করান। বর্তমানে মন্দির দু’টির গায়ে দেখা দিয়েছে ফাটল। নষ্ট হচ্ছে টেরাকোটার কাজ।

১৮৩৩ সালে বর্ধমানের রাজা মহতাবচাঁদ ভাগীরথীর গা ঘেঁষে এক একর ৪৩ শতক জমির উপরে তৈরি করান সমাজবাড়ি। সেখানে দু’টি মন্দিরের মধ্যে একটি তেজচাঁদ এবং অন্যটি তাঁর স্ত্রী কমলকুমারীর স্মৃতিতে তৈরি হয়। ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা সমাজবাড়ির বেশির ভাগ সম্পত্তি ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেখানে থাকে একটি ১৭ চূড়া ও একটি নররত্ন মন্দির ধ্বংসের মুখে। দাঁতনকাঠিতলার মসজিদের গম্বুজগুলিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মসজিদের পিছনের অংশ থেকে খসে পড়ছে কাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অতিবৃষ্টি হলে টেরাকোটার কাজে ভরা লালজি মন্দির চত্বরেও জমে যায় জল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকদের নজরে আসে জল জমার কারণে মন্দিরের দেওয়ালে নোনা ধরছে। শহরের বাসিন্দা সুকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের দুর্ভাগ্য কেউ প্রাচীন নিদর্শনগুলি রক্ষা করতে এগিয়ে আসে না।’’ বছর দশেক আগে ১০৮ শিবমন্দির এবং রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে তৈরি করা হয়েছিল আলো-ছায়ার খেলা। তারপর থেকে আরও নতুন কোনও কাজ হয়নি, জানান তিনি।

বছর দেড়েক আগে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে ঠিক হয় পর্যটকদের সুবিধা দিতে বেশ কিছু বাড়িতে ‘হোম স্টে’ তৈরি করা হবে। তা হয়নি। বছর তিনেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজবাড়ি মাঠের পর্যটন উৎসবও। হয়নি কোনও অতিথিশালাও। পর্যটকদের দাবি, শহরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরে দেখতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। তার পরে আর সময় কাটানোর কিছু না থাকায় পর্যটকেরা ফিরে যান। মন্দির লাগোয়া এলাকা, ভাগীরথীর তীরে হোটেল, কটেজ গড়া হলে ভাল হয়, দাবি তাঁদের। কলকাতা থেকে কালনায় আসা এক পর্যটক বাসুদেব পণ্ডিত বলেন, ‘‘বেড়ানোর জায়গাগুলির আশেপাশে কেনাকাটার অনেক কিছু মেলে। শুনেছি কালনার তাঁত শাড়ি, মাখা সন্দেশ বিখ্যাত। মন্দির গায়ে থাকা টেরাকোটার কারুকার্য মাটিত ফুটিয়ে তুলে বিক্রি করলে ক্রেতার অভাব হবে না। এ সব নিয়ে প্রশাসনিক উদ্যোগে মন্দির লাগোয়া এলাকায় স্টল খোলা উচিত।’’ পর্যটকদের অনেকেরই পরামর্শ, প্রাচীন নিদর্শনের সঙ্গে জোর দিতে হবে বিনোদনে। বাইরে থেকে আসা লোকজন শহরে এসে থাকতে শুরু করলে ব্যবসা বাড়বে।

কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘পুরসভা ভাগীরথীর চরে হোম-স্টে গড়া-সহ পর্যটকদের সুবিধার জন্য কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে বলে শুনেছি। মহকুমা প্রশাসনও ভাবছে কালনার পর্যটন নিয়ে।’’ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Historical Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE