Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Dengue Fear

‘এটা কামড়েছে’! মশা ক্যারিব্যাগে ভরে বর্ধমানের হাসপাতালে হাজির ডেঙ্গি আতঙ্কে জড়সড় যুবক

সারা বছরই বাড়িতে মশার উৎপাত সহ্য করেন মনসুর আলি শেখ। কিন্তু এখন ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে তিনি বেশ ভীত। তাঁর দাবি, ডেঙ্গির মশায় গ্রাম ছেয়ে গিয়েছে। রাস্তায় হাঁটাচলাও দায় হয়ে পড়েছে।

মশা নিয়ে মনসুর আলি।

মশা নিয়ে মনসুর আলি। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৫০
Share: Save:

সাপে কামড়ালে সেই সাপকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হওয়ার কথা আকছার শোনা যায়। কিন্তু মশা কামড়ালে সেই মশাকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হওয়া? হ্যাঁ, সেটিও করে ফেললেন পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের যুবক। যে মশা কামড়েছে, সেটি এডিস কি না, জানেন না তিনি। তাই ডেঙ্গির আতঙ্কে ভোগা ওই যুবক প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে অনেক গুলো মশা ভরে চিকিৎসকের সামনে হাজির হন। এমন ঘটনায় হকচকিয়ে গেলেন চিকিৎসকেরা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালে গিয়েছিলেন এক যুবক। তাঁর হাতে ছিল একটি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। তাতে ছিল বেশ কয়েক’টা মশা। ব্যাপারটা কী? রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই পূর্ব বর্ধমানও। এমনিতে সারা বছরই বাড়িতে মশার উৎপাত সহ্য করেন মঙ্গলকোট থানার খুর্তুবা গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলি শেখ। কিন্তু এখন ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে তিনি বেশ ভীত। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের মশা আগে দেখিনি। সাইজে দশাশই। পা গুলোও লম্বা লম্বা।’’ নির্ঘাত ডেঙ্গির মশাই হবে এগুলো, এই ভেবে শ’দেড়েক মশাকে বন্দি করে সটান হাসপাতালে চলে যান মনসুর।

মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসক জুলফিকর আলিকে মনসুর মশাগুলো দেখান। ডাক্তারবাবু প্রথমে ভেবেছিলেন, কোনও শারীরিক সমস্যা নিয়ে এসেছেন মনসুর। কিন্তু, ক্যারিব্যাগ থেকে তাঁকে মশা বার করতে দেখে অবাক হয়ে যান ওই চিকিৎসক। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘‘বলুন, আপনার শরীরে কী সমস্যা?’’ মনসুর জবাবে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি স্যার। তবে আর কিছু দিন পরেই মনে হয়, এন্তেকাল হয়ে যাবে। আপনারা এ ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আমার কী হবে?’’ তখনও কিছু বুঝতে পারেননি চিকিৎসক। তিনি হাঁ করে ‘রোগী’র মুখের দিকে চেয়ে ছিলেন। তখনই মনসুর ক্যারিব্যাগটা ডাক্তারবাবুর হাতে তুলে দেন। বলেন, ‘‘এই দেখুন। এই রকম ডেঙ্গি মশায় গ্রাম ছেয়ে গিয়েছে। চলাফেরা করার সময়েও মশা এসে ছেঁকে ধরছে। এদের সঙ্গে থাকলে আর কত দিন বাঁচতে পারব স্যর?’’ মনসুর কাতর স্বরে এ-ও বলেন, ‘‘আমার ওষুধ চাই না। মশা মারার ওষুধ-পানি কিছু দিন।’’

চিকিৎসক জুলফিকর জানান, তিনি দেখেন ওই ক্যারিব্যাগে অন্তত শ’দেড়েক মশা আছে। সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু জ্যান্ত মশাও রয়েছে। মনসুরের কাণ্ডে হেসেই ফেলেন চিকিৎসক। দু’জনের কথোপকথন শুনে কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী তখন এগিয়ে এসেছেন। শুনে তাঁরাও হেসে লুটোপাটি খান। কিন্তু মনসুর অত্যন্ত গম্ভীর। শেষে তাঁকে মশার হাত থেকে বাঁচতে কী করণীয়, সে সব বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘‘এই আবহাওয়ায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। আগে দেখেছি, সাপে কাটলে সেই সাপ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসতে। এ ভাবে কাউকে মশা ধরে হাসপাতালে আসতে দেখেনি।’’ তিনি জানান, মশার লার্ভা নিধনে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে, মনসুর জানান, তাঁদের গ্রামে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে হবে। এলাকায় নোংরা-আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

এই খবর পেয়ে মনসুরের এলাকায় গিয়েছিলেন মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি বিডিওকে জানাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Fear Mangalkot Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy