উপরে, ধৃত তিন। নিজস্ব চিত্র
চোর সন্দেহে একজোট হয়ে মারধর, পরে অঝোর বৃষ্টির মধ্যে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে গণপিটুনির অভিযোগ উঠেছে মেমারিতে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মেমারি রক্ষাকালীতলার বাসিন্দা উদয় মণ্ডল (৪৮)। অভিযুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন মেমারির ইন্দ্রপস্থ পাড়ার প্রশান্ত মণ্ডল, হাসপাতালপাড়ার কবিপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় ও জোয়ানপুরের শেখ মুমতাজ আলি। মৃতের খুড়তুতো বৌদি দীপান্বিতা মণ্ডল মেমারি থানায় অভিযোগে জানিয়েছেন, চোর সন্দেহে এই তিন জনই দেওরকে পিটিয়ে খুন করেছেন। মৃতের ভাইপো শুভজিৎও বলেন, “একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে কাকাকে বেঁধে ওই তিন জন মারধর করেছে। পুলিশ গিয়ে কাকাকে উদ্ধার করে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্ষাকালীতলায় মৃতের বাড়ি। তবে সেখানে কেউ থাকেন না। উদয়বাবু ভবঘুরের মতো রাস্তাতেই থাকতেন, চেয়েচিন্তে খাবার জোগাড় করতেন। দিনের বেশির ভাগ সময়ে তিনি নেশায় আচ্ছন্ন থাকতেন, বলেও দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। রক্ষাকালীতলা থেকে হাসপাতালের এলাকার মধ্যেই দেখা যেত তাঁকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিন জনেরই মেমারি হাসপাতালের সামনে দোকান রয়েছে। কয়েক দিন আগে ধৃত প্রশান্তর প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সামনে থেকে মোটরবাইকের হাতলে ঝোলানো সবুজ রঙের একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ চুরি যায়। তার ভিতর কয়েকশো টাকা, মোবাইল ফোন-সহ বেশ কিছু নথিও ছিল বলে অভিযোগ। ব্যাগ হারানোর সন্দেহ গিয়ে পড়ে উদয়বাবুর উপর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তাঁকে আটকে একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ‘সন্তোষজনক’ উত্তর না মেলায় সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে ফের তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনই রাস্তায় ফেলে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরেও ‘আক্রোশ’ কমেনি। তাঁকে টেনে-হেঁচড়ে গলির ভিতর নিয়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে এলোপাথারি ‘মারধর’ করা হয়। নেতিয়ে পড়েন উদয়বাবু। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। মৃতের পরিজনেদের দাবি, “উদয় চুরি করছে এমন কোনও প্রমাণ ওঁদের কাছে ছিল না। চেয়েচিন্তে খাবার জোগাড় করত। কারওর কোনও দিন ক্ষতি করেনি। সেই মানুষটাকে তিন জন মিলে নৃশংস ভাবে খুন করল!”
গণপিটুনির ঘটনা রুখতে সম্প্রতি কড়া আইন নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। তার পরেও এই ঘটনা চলছেই। আইনজীবী তথা মেমারির এক কাউন্সিলর শ্যামল সরকার বলেন, “আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয়। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন।’’ উপপুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত বলেন, “আইন অমান্য করলে শাস্তি পেতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy