জিটি রোডের ধারে নর্দমায় জমে রয়েছে আবর্জনা। ছবি: উদিত সিংহ
সিকি শতাব্দী আগে ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ থেকে পুরসভা হয়েছে মেমারি। বসতি বেড়েছে। বহুতল গড়ে উঠছে। গতি এসেছে জিটি রোডের ধারের এই শহরের জীবনযাত্রায়। কিন্তু থমকে রয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা।
মেমারির মানুষজনের অভিযোগ, শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই নিকাশির সমস্যা রয়েছে। কোথাও নোংরা নয়ানজুলি, কোথাও বদ্ধ নর্দমায় রোগ ছড়াচ্ছে। পুরভোটের মুখে বেহাল নিকাশি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। যদিও শাসক দলের পাল্টা দাবি, গত কয়েকবছরে মেমারি শহরের নিকাশির ভোল পাল্টে গিয়েছে। পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী বলেন, ‘‘আমাদের আর্জি মেনে নাগরিকেরা একটু সচেতন হলেই নিকাশির বাকি সমস্যা নিশ্চিত ভাবে কেটে যাবে।’’
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরবোর্ড বামেদের দখলে থাকাকালীন পরিকল্পনা হয়েছিল, মধ্য মেমারির নিকাশির জল শহরের দক্ষিণ দিকের সাতটি ওয়ার্ড পেরিয়ে রেললাইন পার হয়ে দু’নম্বর ওয়ার্ডে ডিভিসি সেচখালে মিশবে। বাকি ন’টি ওয়ার্ডের জল ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাতার কাছে সেচখালে মিশবে। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবের মুখ দেখেনি। ২০১০ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে, নিকাশি নিয়ে বহু টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু অসমাপ্ত ও অপরিকল্পিত ভাবে কিছু নর্দমা তৈরি ছাড়া কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের। তাঁদের ক্ষোভ, নালা নিয়মিত সাফাই হয় না। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার জল উপচে রাস্তা ভাসে। জমা জলে মশা-মাছির উপদ্রব হয়।
তৃণমূলের দাবি, কয়েক কিলোমিটার কাঁচা নর্দমা পাকা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে গাঙুর নদী সংস্কার করা হচ্ছে। শহরকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে দু’শোর কাছাকাছি লোক নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এটা যে যথেষ্ট নয়, তা-ও মেনে নিচ্ছেন পুর-কর্তারা। শহরের অন্তত ১০টি ওয়ার্ডের নিকাশি বেহাল বলে মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। বিরোধীদেরও অভিযোগ, ওয়ার্ডভিত্তিক রিপোর্ট করলে দেখা যাবে সুভাষনগরের ভিতরের নর্দমা পরিষ্কার হয় না। জিটি রোডের নয়ানজুলি আবর্জনায় ভর্তি। সুলতানপুর, চকদিঘির বড় নর্দমা পরিষ্কার হয় না। রেলের নয়ানজুলি, কৃষ্ণবাজারে নর্দমা, ছানাপট্টি-গ্রীনপার্ক এলাকা সাফাইয়ের অবস্থাও তথৈবচ। এর সঙ্গেই সোমেশ্বরতলা প্রাথমিক স্কুলের কাছে কালভার্ট ও ব্লক অফিসের কাছের কালভার্টটিও সাফ হয় না বলে জানান তাঁরা।
শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি ঠিকমতো হয় না বলে নর্দমার নোংরা, পোকামাকড় বাড়িতে ঢুকে যায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে প্রতিদিন আবর্জনা ফেলার সমস্যা। তাঁদের দাবি, পুরসভার নিজস্ব ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ না থাকায় শহরের বেশ কিছু জায়গা যেমন, স্কুল মোড়, চকদিঘি মোড়, বামুনপাড়ায় প্রায় সময়েই জঞ্জাল পড়ে থাকে। পুর কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য জনগণের কাছ থেকে এক লপ্তে ২০-২৫ বিঘা জমি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।
মেমারি শহরের সিপিএম নেতা পিন্টু ভট্টাচার্যের দাবি, “আশ্বাস ছাড়া পুরসভার কাছ থেকে বাসিন্দারা কিছুই পাননি। নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ ও পরিকল্পনা বাম বোর্ডই করেছিল। এই বোর্ড সেটা ধ্বংস করায় মানুষের যন্ত্রণা বাড়ছে।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের কথায়, “কোটি কোটি টাকা খরচ করে অপরিকল্পিত ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।’’ যদিও পুরসভা মনে করছে, নিকাশি নালা নিয়ে সমস্যার মূলে রয়েছে প্লাস্টিক। নালা পরিষ্কারের পরেই ফের প্লাস্টিক জমছে। ফলে আটকে যাচ্ছে জল। পুরপ্রধানের দাবি, “প্লাস্টিক মুক্ত শহরের পথে অনেকটাই এগিয়েছিলাম। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে ফের প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। আমাদের নিবেদন, প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করুন। নাগরিকেরা সচেতন হলেই শহরের নিকাশির সমস্যা কেটে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy