Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটক নেই, মাছি তাড়াচ্ছে মাইথন

সমস্যায় পড়তে হবে, তা জানাই ছিল। তবু সপ্তাহান্তে সপরিবারেই মাইথনে এসে হাজির হয়েছেন বেলুড়ের বাসিন্দা বরুণ চক্রবর্তী। না হলে তো লোকসানের বোঝা আরও বাড়ত। কারণ, মাস দেড়েক আগেই হোটেলের ঘর বুক করে রেখেছিলেন।

ঘাটেই বাঁধা নৌকা। মাইথনে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

ঘাটেই বাঁধা নৌকা। মাইথনে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

সুশান্ত বণিক
কুলটি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩২
Share: Save:

সমস্যায় পড়তে হবে, তা জানাই ছিল। তবু সপ্তাহান্তে সপরিবারেই মাইথনে এসে হাজির হয়েছেন বেলুড়ের বাসিন্দা বরুণ চক্রবর্তী। না হলে তো লোকসানের বোঝা আরও বাড়ত। কারণ, মাস দেড়েক আগেই হোটেলের ঘর বুক করে রেখেছিলেন। তখন তো আর জানা ছিল না, এমন নোটের গেরো তৈরি হবে। কিন্তু বেড়াতে এসেও কার্যত গৃহবন্দি তিনি। বড় নোট লেনদেনে অনেকেই নারাজ, ছোট নোটের অভাব। তাই খরচ করতে হচ্ছে মেপে। শুধু বরুণবাবু নন, তাঁর মতো আরও যাঁরা এসেছেন সকলেরই এক পরিস্থিতি। এ সবের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

শীতের হাওয়া বইতে শুরু করলেই মাইথনে পর্যটকের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করে। কিন্তু এ বার নোটের ধাক্কায় সব একেবারে বেসামাল। পর্যটকের দেখা নেই বললেই চলে। যে গুটিকয়েক ক’জন এসেছেন, তাঁরাও খরচ করছেন পাইপয়সা বুঝে। এলাকার ব্যবসায়ী ঝন্টু দেবনাথের কথায়, ‘‘এমনিতে এখানে জিনিসের দাম একটই বেশিই। পর্যটকেরাও আপত্তি তোলেন না। কিন্তু এ বার দাম কমিয়েও খদ্দের পাচ্ছি না।’’

প্রায় মাছি তাড়ানোর মতো অবস্থা এলাকার হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলির। রাজ্য পর্যটন দফতরের হোটেলে দেখা মিলল কলকাতার গড়িয়া থেকে আসা দেবাশিস ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘হোটেল বুকিং ছিল বলে আসতে হয়েছে। খুচরোর ঝামেলায় অনেক পরিকল্পনা কাটছাঁট করেছি।’’ স্থানীয় একটি আধা সরকারি হোটেলের ম্যানেজার রাকেশ কোলে বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেও বাজার ভাল ছিল। রেস্তোরাঁয় অনেকে খেতে এসেছিলেন। কিন্তু, এই সপ্তাহে একেবারে বাজার পড়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, অনেকেই এখানে পৌঁছে হোটেলের ঘর ভাড়া করেন। এ বার সে রকমও কেউ আসেননি। বিপাকে পড়েছেন বিদেশি পর্যটকেরাও। পকেটে রেস্ত থাকলেও খরচ করার উপায় নেই, কারণ সে সব নোট হয়ে গিয়েছে অচল। ফ্রান্স থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা জিম সেবেস্তাইন বলেন, ‘‘এর পরে শান্তিনিকেতন ও বক্রেশ্বর যাব। কত খরচ হবে জানি না। দুশ্চিন্তায় আছি।’’

মাইথনে শুধু দূরের পর্যটকেরাই ভিড় জমান, এমন নয়। শহর লাগোয়া বাংলা-ঝাড়খন্ডের বাসিন্দারাও নিয়মিত সময় কাটাতে আসেন। কিন্তু নোট বাতিলের ধাক্কায় তাঁদের ভিড়ও কমেছে। বিকেলে মাইথনে নৌকাবিহার পর্যটকদের কাছে খুব প্রিয়। দু’রাজ্যের কয়েকশো বাসিন্দা প্রতিদিন নৌকায় চেপে দ্বীপগুলিতে বেড়াতে যান। কিন্তু পর্যটক না পেয়ে মাথায় হাত মাঝিদের। মুখ থুবড়ে পডেছে তাঁদের রোজগার। ‘মাইথন বোটম্যান ট্রান্সপোর্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি’র সম্পাদক রহমত আলি বলেন, ‘‘এই সময় আমারা নাওয়াখাওয়ার সময় পাই না। কিন্তু কয়েক দিন ধরে প্রায় ফাঁকা বসে আছি। সংসার টানব কী করে, বুঝতে পারছি না।’’ তাঁরা জানান, পর্যটকেরা বাতিল নোট দিতে চাইছেন। কিন্তু তাঁরা তা নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারছেন না। নৌকা চালক বাবলু মির্ধার দাবি, তাঁদের সবার সমবায় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। সেখানে বাতিল টাকা বদল করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে তা করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।

কবে এই অচলাবস্থা কাটবে, কবে আবার দু’পয়সা রোজগার হবে, সে সব ভেবেই এখন দিন কাটছে বাবলুদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Tourism Demonetization Maithon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy