কালনায় মাটি পাচার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
রাত হলেই ঝপাঝপ কোদাল চলছে ভাগীরথীর চরে। অন্ধকার থাকতে থাকতেই মাটি কেটে ট্রলারে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। কোথাও কোথাও প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে পুকুর, ভেড়ি, শুকিয়ে যাওয়া নদীর মাটি। মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ তো ছিলই, মঙ্গলবার কালনা ২ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং ব্লক কার্যালয়ে বিষয়টি জানান তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েতের কয়েক জন সদস্যও।
কাকভোরে কালনা শহরের ভাগীরথীর ঘাটে দাঁড়ালেই নজরে পড়ে মাটি মাফিয়াদের কারবার। মোটর লাগানো বিভিন্ন আকারের নৌকা মাটি বোঝাই করে চলে কালনা থেকে গুপ্তিপাড়ার দিকে। নৌকাগুলিতে মোটামুটি ছয় থেকে দশ জন লোক থাকেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলো, মাটি কাটার নানা সরঞ্জাম নিয়ে নৌকাগুলি ভাগীরথী ধরে কালনা এবং হুগলি জেলার বিভিন্ন চরে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে বালি মিশ্রিত মাটি নিয়ে ফেরেন কারবারিরা। ছোট নৌকাগুলিতে থাকে প্রায় ৫০০ সিএফটি মাটি। বড় নৌকাগুলিতে থাকে ৭০০ সিফটি মাটি। সব থেকে বেশি নৌকা নামে কালনা ২ ব্লকের সাতগাছি এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কারবারিরা বিভিন্ন ঘাটে নৌকা এনে প্রতি ১০০ সিফটি মাটি ন’শো থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বেলা ১০টা পর্যন্ত চলে কারবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশেরও এতে মদত রয়েছে বলে অভিযোগ।
শুধু জলপথে নয়, মাটির কারবার চলে স্থলপথেও। মাস দেড়েক ধরে ভোট নিয়ে ব্যস্ত প্রশাসনিক কর্তারা। এই সুযোগে বেড়েছে কারবার। সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘‘এলাকার একটি ভেড়ি থেকে প্রচুর মাটি তোলা হয়েছে। সরকার যেখান থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পেতে পারত।’’ ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হরেকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘মাটির বিষয়টি পঞ্চায়েতের দেখার কোনও জায়গা নেই। বিষয়টি বলতে পারবে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।’’ মাটির কারবার চালাতে গিয়ে পথশ্রী প্রকল্পের রাস্তা নষ্ট করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহম্মদ আমানত আলী, পরিমল মণ্ডল, পলাশ মণ্ডল, পঞ্চায়েত সদস্য বিজয় পাত্ররা এ দিন কালনা ২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক (বিএলআরও) দেবব্রত দাস এবং বিডিও মোজাহিদ আলীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কার্যালয়ে থাকা অন্য কয়েক জন আধিকারিকদের মাটির অবৈধ কারবার নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার অন্তত ৪০টি জায়গায় পুকুর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে সরকারি নিয়ম না মেনে। আমানত, পলাশেরা বলেন, ‘‘আমরা মাটি কাটার বিপক্ষে নই।কারন মাটি কাটা হলে বহু শ্রমিক কাজ পান। আয় বাড়ে ট্র্যাক্টর মালিকের। কিন্তু বৈধ উপায়ে কাজ হোক।’’ তাঁদের দাবি, বিএলআরও জানিয়েছেন কোনও পুকুর থেকেই অনুমতি নিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে না। সরকার ও দলের বদনাম হচ্ছে এমন কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। বেআইনি কারবারে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
কালনা ২-এর বিডিও জানান, বিএলআরও এবং আইসির সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি যাতে বন্ধ হয় তা দেখা হবে। কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে মাটি কাটা নিয়ে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। কারবার বন্ধ করতে প্রশাসন অভিযানে নামবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy