মাধবী দাস। নিজস্ব চিত্র
মা হাসপাতাল থেকে ফিরলেই ছুটে গিয়ে কোলে উঠতে চায় একরত্তি মেয়ে। বুক ফাটলেও মেয়েকে জাপটে ধরে আদর করতে পারেন না তিনি। তিন বছরের মেয়েকে রেখে টানা ১৪ দিন নিভৃতবাসেও থাকতে হয়েছে তাঁকে। তবু কর্তব্যচ্যুত হননি মাধবী দাস। জামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই নার্সের বিশ্বাস, লড়াইটা অসম হলেও জয় কঠিন নয়।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত শাশুড়ি, ছোট মেয়েকে নিয়ে জামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে থাকেন মাধবী। স্বামী অর্ঘ্য সাধুখাঁ কলকাতায় চাকরি করেন। হাসপাতালে সকাল-রাতে ডিউটি সামলে মাধবীকেই নজর রাখতে হয় বাড়ির প্রতিটি প্রয়োজনেও। তিনি জানান, নির্দিষ্ট ডিউটি ছাড়াও, কখনও মাঝরাতে বা ভোরে হাসপাতাল থেকে ডাক আসে। মেয়েকে ফেলে ছুটতে হয়। আবার ফিরেও স্নান, জামাকাপড় পরিষ্কার, আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র স্যানিটাইজ় করে তবেই ধরতে পারেন মেয়েকে। বৃদ্ধা শাশুড়িও অনেক সময় দামাল নাতনিকে একা সামাল দিতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন। তবে ধৈর্য্য হারাননি তাঁরা। বছর চব্বিশের মাধবীর কথায়, ‘‘সর্তক থাকতে হবে। আমি তো একা নই, সবাই মিলে লড়াই করছি।’’
ছ’বছর ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করছেন মাধবী। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়াতেই কাজের চাপ বাড়ে। পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখাশোনা, পরীক্ষা করানো, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সামলানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই ছিল। সে সময় আক্রান্ত হন তিনিও। তবে তেমন উপসর্গ না থাকায় বুঝতে পারেননি। পরে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট আসে পজ়িটিভ। ওই নার্সের কথায়, ‘‘বাইরে থেকে কে সংক্রমণ নিয়ে আসছেন বলা শক্ত। খুব সতর্ক ছিলাম। কিন্তু রোগীদের দেখভালের কাজে সবসময় দূরত্ব রাখা সম্ভব হয়নি হয়তো। তবে ভয় পাইনি, এটুকু বলতে পারি।’’
তিনি জানান, নিভৃতবাসের সময়টাই সবচেয়ে কঠিন। আবাসনের একটি ঘরেই নিজেকে ‘বন্দি’ করে ফেলেছিলেন তিনি। মাধবী বলেন, ‘‘ওই ক’টা দিন কী ভাবে কেটেছে, বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। ওই অনুভূতিও বলে বোঝাতে পারব না। পাশের ঘরে মেয়ে আমাকে খুঁজছে। ‘মাম কই, মাম কই’, বলে কাঁদছে। বুক ফেটে যেত। খালি মনে হত, ছুটে গিয়ে মেয়েকে বুকে তুলে নিই। আবার শাশুড়ি মারও ডায়াবেটিস রয়েছে। ফলে, আমার থেকে তাঁর যেন সংক্রমণ না হয়, সেই চিন্তা ছিল। মনে হত, নাতনিকে সামলাতে গিয়ে মা নিজের ওষুধ-খাবার খাচ্ছেন তো!’’ তবে এখন মেয়েও বুঝে গিয়েছে মায়ের ‘রুটিন’। আগে নিজে সাফসুতরো হয়ে তবে বাড়ির কোনও জিনিসে হাত দেন বা মেয়েকে ধরেন তিনি। মাধবী বলেন, ‘‘নিয়মটা কঠিন। কিন্তু প্রত্যেককে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ছেলেমেয়ে, বাড়ির বড়দের সুস্থ রাখতে এটা বাধ্যতামূলক।’’
পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “মাধবীর মতো অনেকেই নিজেদের সন্তানকে বাড়িতে রেখে করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। এটা খুব কঠিন। ওঁদের কুর্নিশ।’’
এখন করোনা-উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগীদের বোঝানোর দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছেন মাধবীরা। পুজোর বাজারে মানুষের ঢল দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত তাঁরা। মাধবীর কথায়, “লোকজনকে দেখে ভয় লাগছে। বেশির ভাগই সতর্ক নন। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে জিততে গেলে সবাইকে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে, সতর্ক হয়ে চলতে হবে। এটাই একমাত্র পথ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy