এক লহমায় বদলে গিয়েছে ভাতারের লটারি বিক্রেতা রামকৃষ্ণ দাসের জীবন (ইনসেটে, লটারির ফল)। —নিজস্ব চিত্র।
অন্যের ভাগ্য ফেরানোর জন্য প্রতিদিনই তাঁদের লটারির টিকিট কেনাতে পীড়াপীড়ি করতে হত। দীর্ঘ ১৮ বছরে তাঁদের অনেকের ভাগ্য ফিরলেও নিজের সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’— এ দশা কাটেনি। তবে সোমবার রথের দিনে রাতারাতি পাল্টে গিয়েছে ভাতারের লটারি বিক্রেতা রামকৃষ্ণ দাসের জীবন। মাত্র ৩০ টাকা খসিয়ে পেয়ে গিয়েছেন কোটি টাকার লটারি। তবে মজার কথা, নিজের দোকানের টিকিট বেচে নয়। বরং অন্য এক লটারি বিক্রেতার কাছ থেকেই সেই কোটি টাকার লটারির টিকিটটি কিনেছিলেন রামকৃষ্ণ।
সোমবার রাতে ৩০ টাকা খরচ করে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই দোকানে আসা মানুষজনকে বলি, আপনার ভাগ্য পরীক্ষা করুন।’’ তবে এ বার একধাক্কায় নিজেরই ভাগ্যবদল হয়ে গিয়েছে। নিজের লটারির দোকান থাকতে হঠাৎ অন্যের থেকে লটারির টিকিট কিনতে গেলেন কেন? রামকৃষ্ণ বলেন, ‘‘সোমবার দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎই মনে হয়েছিল একটা লটারির টিকিট কিনি। তাই ওই টিকিটটা কিনেছিলাম।’’ সোমবার রাতেই রামকৃষ্ণ জানতে পারেন, খামখেয়ালের বশে কেনা সে টিকিটেই তিনি কোটিপতি!
এক লহমায় জীবন বদলে যাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই খুশির ঢল নেমেছে রামকৃষ্ণের পরিবারে। অথচ সোমবার রাতের আগে সে সংসারে টানাটানির অভাব ছিল না। পাঁচ ভাই, দু’বোন ছাড়াও স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ভরা সংসার। বছর পঞ্চাশের রামকৃষ্ণ এক দিন কাজে না গেলে হাঁড়ি চড়ে না তাঁদের সংসারে। সরকারি খাস জমিতে বাড়ি করে সপরিবার বসবাস। কোনও রকমে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর এক মেয়ে আর স্ত্রী-কে নিয়ে একটিমাত্র ঘরে থাকেন। তার মধ্যেই রান্নাবান্না। স্ত্রী মনা দাস বললেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই এই একটিমাত্র ঘরে থাকাখাওয়া, ওঠাবসা। কখনও মেয়ে-জামাই এ বাড়িতে বেড়াতে এলে আমাদের বাইরে ঘুমোতে হয়। বর্ষাবাদলে, শীতে খুব কষ্টে পড়তে হয়।’’ এ বার তো ভাগ্যবদল! কী করবেন লটারির টাকায়? মনার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বপ্ন, একটা ভাল বাড়ি করব।’’
মনার মতোই স্বপ্নপূরণ হয়েছে রামকৃষ্ণেরও। তবে কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে করে তিনি বললেন, ‘‘লটারির ব্যবসা করলেও আমি নিঃস্ব। কয়েক লক্ষ টাকার ঋণ।’’ তবে এ বার সুখের দিন এসেছে। তার পিছনে জগন্নাথের কৃপাও দেখছেন তিনি। রামকৃষ্ণের দাবি, ‘‘এ টাকা আমাকে জগন্নাথ দিয়েছেন।’’ তবে কোটিপতি হলেও সে টাকায় পায়ের উপর পা তুলে কাটাতে চান না রামকৃষ্ণ। তিনি বলেন, ‘‘লটারির ব্যবসা ছেড়ে দেব। এ বার একটা নতুন টোটো কিনব। টোটো চালিয়েই সংসার চালাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy