Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Migrant Labourers

খালি তেলের ট্যাঙ্কারে চেপে ফেরার চেষ্টা

পঞ্জাব থেকে একটি খালি তেলের ট্যাঙ্কারে উঠেছিলেন প্রায় কুড়ি জন। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পঞ্জাবি মোড়ের কাছে দলটিকে আটক করে পুলিশ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৭
Share: Save:

মেদিনীপুর থেকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে একটি পণ্যবাহী খালি ট্রাকে চেপে বসেছিলেন দশ জন। পশ্চিম বর্ধমানে রানিগঞ্জের সীমানায় মেজিয়া সেতুর কাছে দলটি নজরে পড়ে পুলিশের।

ঘটনা দুই: পঞ্জাব থেকে একটি খালি তেলের ট্যাঙ্কারে উঠেছিলেন প্রায় কুড়ি জন। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পঞ্জাবি মোড়ের কাছে দলটিকে আটক করে পুলিশ।

দু’টি ক্ষেত্রেই বাড়ি ফিরতে যাওয়া এই মানুষগুলি মুর্শিদাবাদের নানা এলাকার বাসিন্দা। —এমন এক-দু’টি ঘটনা নয়। বরং, ‘লকডাউন পর্বে’ পথে নেমে এমন নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ই, জানা গিয়েছে রানিগঞ্জ থানার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ি ফিরতে চাওয়া এই মানুষগুলি ‘পরিযায়ী’ শ্রমিক। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “পুলিশকর্মীরা অত্যন্ত ধৈর্য্যের পরিচয় দিচ্ছেন। এ ভাবে যাঁরা বাড়ি ফিরতে চাইছেন, তাঁদের প্রত্যেককে পরিবারের সদস্যের মতো করে করোনা-পরিস্থিতির কথা বোঝানো হচ্ছে।”

কিন্তু এ ভাবে যাঁরা বাড়ি ফিরতে চাইছেন, অর্থাৎ সেই ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকেরা কী বলছেন? পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ধরা পড়ে যাওয়ার পরে তাঁরা জানাচ্ছেন, কর্মস্থলে কাজ নেই। পকেট ফাঁকা। বাড়ির অবস্থাও ভাল নয়। তাই যে ভাবে হোক বাড়ি ফিরতে চাওয়া।

রানিগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়া হয়ে মেজিয়া সেতু দিয়ে সাতটি মোটরবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন বিহার ও উত্তরপ্রদেশের ১৪ জন যুবক। পুলিশের নজর এড়াতে তাঁরা বিভিন্ন গ্রামের ভিতর দিয়ে ফিরছিলেন। মেজিয়া সেতুর কাছে তাঁদের ধরে ফেলে পুলিশ। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্তা বলেন, “বাইক আরোহীদের চোখ-মুখ দেখে তাঁদের অবস্থার কথা বোঝা যাচ্ছিল।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাইক আরোহীরা জানান, টানা দু’দিন সে ভাবে খাওয়া জোটেনি। প্রশাসনের তরফে ওই যুবকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা চিকিৎসক জানান, এ ভাবে আরও এক দিন কাটলে ওই দলটির অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকদের সবাইকেই রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ার দু’টি ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকেরই নিয়মিত ভাবে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া, বিভিন্ন এলাকা থেকে আনাজের ট্রাকে চেপে বাড়ি ফেরার চেষ্টাও ঘটছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ সক্রিয় বলে কমিশনারেট জানিয়েছে। পুলিশকর্তারা জানান, এ-ও দেখা গিয়েছে, আনাজের ট্রাকে আনাজের বস্তা জড়িয়ে আন্তঃরাজ্য যাতায়াতের চেষ্টা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ‘পরিযায়ী’ শ্রমিক বলেন, “হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলাম। মাঝ রাস্তায় আর পারিনি। যে ক’টা টাকা ছিল, তা দিয়েই আনাজের ট্রাকে উঠি। কিন্তু ধরা পড়ে গেলাম।”

এই ‘আক্ষেপ’ করোনা-পরিস্থিতির জেরে জীবন-জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকদের অনেকেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Labourers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE