এখানেই দুর্ঘটনায় পড়ে বাস। —নিজস্ব চিত্র।
পাড়া বা ক্লাবের মণ্ডপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন চিত্তরঞ্জন ঘোষ। বাদশাহি রোড থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে তাঁদের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ। এমন সময়ে বিকট আওয়াজ। চোখেমুখে উদ্বেগ নিয়ে মণ্ডপ তৈরিতে ব্যস্ত থাকা ১০-১২ জনকে নিয়ে তিনি ছোটেন বাদশাহি রোডে। গিয়ে দেখেন, ধান জমি ও নয়ানজুলির মাঝে উল্টে পড়ে রয়েছে কলকাতা-কান্দি রুটের বাস। বাসের ভিতর থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। কয়েক জন আবার বাস থেকে ছিটকে জমির উপরে কাতরাচ্ছেন।
চিত্তরঞ্জন বলেন, “মণ্ডপের কাজ ছেড়ে আমাদের গ্রামে অনেকেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন। উদ্ধার করতে গিয়ে কয়েক জন জখমও হয়েছেন। পুলিশও তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে। তবে সরস্বতী পুজোর আগের রাতে গ্রামে এ রকম দুর্ঘটনায় আমাদের কারও মন ভাল নেই। রাতারাতি পুজোর জাঁকজমক কমানো হয়েছে।”
মঙ্গলবার বাদশাহি রোডে ওই দুর্ঘটনার আগে, সোমবার রাতেও নতুনগ্রামের কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় এক জন প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রাজ্য সড়কে ‘হাম্প’ থাকলেও, রাতে যাতায়াত করা অনেক বাস, ট্রাক, ডাম্পার গতি তুলে ছোটে। ফলে, মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।
শুধু চিত্তরঞ্জন নন, মঙ্গলবার রাতে মণ্ডপ ছেড়ে দুর্ঘটনাস্থলে যান গ্রামের গোটা সাতেক পুজোর উদ্যোক্তারা। উদ্ধারকাজে জখম হয়েছেন ছোটন পাল, চঞ্চল খাঁ, আশিস খাঁয়েরা। তাঁরা বলেন, “বিদ্যুৎ চলে গেল। তার পরেই বিকট আওয়াজ। আমরা ভেবেছিলাম ট্যাঙ্কার উল্টেছে। কাছে গিয়ে দেখি, বাস পড়ে রয়েছে। যাত্রীদের কান্নার আওয়াজ। বাসের উপরে উঠে জানলা ভেঙে যাত্রীদের উদ্ধার করার কাজে হাতে লাগাই।” কলেজ পড়ুয়া সন্দীপ হাটি, রাকেশ খাঁ থেকে স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মাইতি, দেবাশিস রায়েরা বলেন, “উদ্ধারকাজ সেরে কেউ রাত দেড়টা, আবার কেউ ভোর ৪টের সময়ে ফিরেছেন। তার পরে মণ্ডপের বাকি কাজ, আলপনা দেওয়া হয়েছে।”
জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ গ্রামবাসীর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, “ভাতার থানার পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও খুব সাহায্য করেছেন।” এলাকাবাসীর দাবি, এ সব ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজে দেরি হলে বিপদ বাড়ে। অন্ধকারের মধ্যেও দ্রুততার সঙ্গে যাত্রীদের উদ্ধার করে প্রথমে ভাতার হাসপাতাল, সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠায় পুলিশ। যাত্রীদের জিনিসপত্রও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
চিত্তরঞ্জন-সহ কয়েক জন পুজো উদ্যোক্তা বুধবার বিকেলে বলেন, “দুর্ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে শুনেছি। আমরা তাঁর বাড়ি যেতে চাই। প্রয়োজনে পুজোর খরচ বাঁচিয়ে মৃতের পরিবারকে সাহায্য করার কথাও ভেবেছি।’’ ওই সব পুজো উদ্যোক্তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy