অন্ধকার কার্জন গেট। নিজস্ব চিত্র UDIT SINGHA
রাত হলেই অন্ধকারে ডোবে ‘বর্ধমানের ঐতিহ্য’ কার্জন গেট। কিছু দূরে উচ্চ বাতিস্তম্ভের আলোয় ফটকটি আলোকিত থাকে বটে। কিন্তি নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই বাতিস্তম্ভের আলো নিভে গেলে পুরো চত্বরে অন্ধকার ছেয়ে যায়। কার্জন গেট সংলগ্ন বিসি রোডেও পুরসভার পথবাতি জ্বলে না, দাবি শহরবাসীর একাংশের।
ব্যবসায়ী থেকে পথ চলতি মানুষ, সকলেই জানাচ্ছেন, প্রায় মাস খানেক ধরে জ্বলছে না সৌন্দর্যায়নের জন্যে লাগানো কার্জন গেটের আলো। তবে কি কার্জন গেটের ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদ পুরসভার নেই? কার্জন গেটের সামনেই রাজা-রানির মূর্তি রয়েছে। পাশে গুমটির দোকান। সংলগ্ন এলাকায় আবর্জনা পড়ে থাকে, রিকশ-টোটো, মোটরবাইক রাখার অস্থায়ী জায়গা হয়ে উঠেছে এলাকাটি। অনেক আন্দোলনের পরে ২০১৮ সালে কার্জন গেটে আলো লাগানোর ব্যবস্থা করে পুরসভা। মাঝে আলোয় বৈচিত্রও আনা হয়েছিল। রাতে আলোকিত কার্জন গেটের ছবি তুলতে আসেন অনেকে। অনেকে নিজস্বী তোলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে তা দেখা যাচ্ছে না।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বিসি রোডে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ চলছে। সে কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যদিও শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, সেই কাজ তো বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। তার আগে কেন কার্জন গেটে আলো জ্বলত না? পুরপ্রধান পরেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া, “পুরসভায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
কার্জন গেটের সামনে প্রতিদিন আড্ডা দেন বিশ্বজিৎ সরকার। তিনি বলেন, “কার্জন গেটের সামনে ছবি তোলা খুব সাধারণ বিষয়। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ সেখানে ছবি তোলেন। অন্ধকার কার্জন গেটের সামনে কে আর ছবি তুলবেন?” ঐতিহ্যবাহী ফটকগুলি আলোয় সাজিয়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে বহু জায়গায়। তবে কেন বর্ধমানের ঐতিহ্য অন্ধকারে ডুবে থাকবে? প্রশ্ন শহরবাসীর।
নাট্যব্যক্তিত্ব দেবেশ ঠাকুরের মন্তব্য, “কার্জন গেট বর্ধমানের মুখ। সেটি সাজিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। তা বুঝতে হবে।” বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নশালার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী শ্যামসুন্দর বেরার কথায়, “ওই স্থাপত্য আমাদের আবেগও। তাকে অন্ধকারে ফেলে রাখা ঠিক নয়।” ইতিহাস বলছে, বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদ মহতাব তাঁর সাম্রাজ্য দেখার জন্য লর্ড কার্জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন লর্ড কার্জন। ১৯০৩-০৪ সালে শহরের প্রবেশের মুখে বিজয়চাঁদ ৬৫ ফুট উঁচু ফটক তৈরি করান। মূল ফটকের দু’দিকে খিলানের ছোট ফটকও নির্মাণ করা হয়। গেটের উপরে রয়েছে তিনটি পাথরের নারীমূর্তি। লন্ডনের সিয়ন হাউসের গেটের ধাঁচে এক বছর বেশি সময় ধরে ফটকটি তৈরি করেছিল ম্যাকিনটোস বার্ন কোম্পানি। বিজয়চাঁদ ফটকের নাম দিয়েছিলেন ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া’। ১৯৭৪-এ পূর্ত দফতর সেটির সংস্কার করে। তখন নতুন নাম হয় ‘বিজয় তোরণ’। লোকে অবশ্য আজও ওই স্থাপত্যকে কার্জন গেট নামে চেনে।
শহরের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, “কার্জন গেটের সামনেই বিধায়কের অফিস। কাছেই রয়েছে বিশ্ব বাংলার প্রতীক। কিছু দূরে বাঁকা নদীর পাড়ের ঘড়ি মোড় আলোয় সাজানো। অথচ বর্ধমানের প্রতীককে অন্ধকারে ঢেকে রাখা হয়েছে।” আর এক আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, “কার্জন গেটকে আলোয় ফিরিয়ে আনা উচিত।” স্থানীয় ব্যবসায়ী শীর্ষেন্দু সাধু বলেন, “বিধায়কের কাছে এ নিয়ে দাবি জানানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy