আবাস যোজনার তালিকায় নাম না ওঠায় বিক্ষোভ দেখান এই রকম বাড়ির বাসিন্দারা। পূর্বস্থলীর চুপিতে। —নিজস্ব চিত্র।
নির্মাণ শ্রমিকের কাজ, খেতমজুরি করে দিন চলে। অনেকেই তৈরি করতে পারেননি পাকা বাড়ি। কাঁচা বাড়ি থাকলেও তার অবস্থা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চুপি গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, বহু বার সরকারি প্রকল্পে ঘরের জন্য তাঁরা আবেদন করলেও, তালিকায় নাম ওঠেনি। শুক্রবার হাতের কাছে বিডিওকে পেয়ে গাড়ি আটকে সেই ক্ষোভই উগরে দিয়েছেন, দাবি তাঁদের।
পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের এই গ্রামে বিভিন্ন পাড়া মিলিয়ে প্রায় ৪৭৫ পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের দাবি, পূর্বপাড়ায় অনেক গরিব মানুষ থাকেন। কেউ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, কেউ খেতমজুরি করে সংসার চালান। অনেকেই পাকা বাড়ি তৈরি করতে পারেননি। মাটির দেওয়াল এবং টিন, টালি বা অ্যাসবেস্টসের চালের ঘরে বর্ষায় জল পড়ে। ঘরে ঢুকে পড়ে সাপ। স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ মল্লিক শনিবার দাবি করেন, পূর্বপাড়ায় মাটির বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩৫টি। সরকারি প্রকল্পে এই সব বাড়ি যাতে পাকা হয়, তার জন্য ২০১১ সাল থেকে নানা জায়গায় আবেদন করে এসেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য নন, এমন কিছু লোকের নাম তালিকায় রয়েছে। বিডিও এমনই একটি বাড়িতে পরিদর্শনে এলে বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষোভ জানাতে থাকেন। অনেক মহিলা বিডিও-র গাড়ির কাছে জড়ো হয়ে প্রশ্ন তোলেন, চরম থাকলেও কেন তাঁরা সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি পাবেন না? তাঁদের বাড়ি খতিয়ে দেখার আর্জি জানান। আমজাদের দাবি, ‘‘যাঁদের কাঁচা বাড়ি রয়েছে, এমন একটি তালিকা বিডিও নিয়েছেন। তবে যত দিন না গরিব পরিবারগুলির নাম তালিকায় উঠছে, তত দিন বিশ্বাস নেই।’’
নিজের মাটির ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আশা বিবির অভিযোগ, ‘‘বার বার অতিবৃষ্টিতে ঘরের পিছনের অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাটকাঠির বেড়া দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছি। ঘরে উইপোকায় নষ্ট করে দেয় জিনিসপত্র। বহু বার সরকারি প্রকল্পে ঘরের আবেদন করে আমরা ক্লান্ত।’’ আর এক মহিলা মাশরিফা বিবির দাবি, ‘‘যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁদের নাম তালিকায় উঠেছে। অথচ, আমরা মাটির বাড়িতে বছরের পর বছর কষ্ট করে থাকলেও সরকারি প্রকল্পে ঘর পাচ্ছি না। তাই শুক্রবার বিডিও-র গাড়ি আটকে সে কথা বলি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল শেখের বক্তব্য, ‘‘প্রকৃত যাঁরা গরিব, তাঁদের সরকারি প্রকল্পে ঘর দেওয়া দরকার। কিন্তু বার বার আশ্বাস ছাড়া তাঁরা কিছু পাচ্ছেন না।’’
পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান অনিন্দিতা রায় বলেন, ‘‘আবাস তালিকায় পঞ্চায়েতে ৩১৫ জনের নাম রয়েছে। সেই তালিকা নিয়ে সমীক্ষা চলছে। চুপিতে আট জনের সমীক্ষা বাকি আছে। এই তালিকা তৈরিতে বর্তমান পঞ্চায়েত বোর্ডের কোনও ভূমিকা ছিল না। বিডিও-র গাড়ি ঘিরে যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা এখনও এই পঞ্চায়েতের কাছে তালিকা জমা দেননি। দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’ পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, ওই এলাকায় কিছু মানুষ সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন। আরও কিছু পরিবারের পাকা বাড়ি প্রয়োজন। প্রশাসনের কর্তাদের জানানো হয়েছে, যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে যোগ্যদের ঘর দেওয়া হোক। কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘চুপি গ্রামের বিষয়টি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy