ছাড়িগঙ্গায় স্পিড বোট নিয়ে তখনও চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
শীত পড়লেই পরিযায়ী পাখির টানে ছাড়িগঙ্গায় ভিড় জমায় পর্যটকের দল। নৌকায় জলাশয়ে ঘুরে পাখি দেখেন, ছবি তোলেন অনেকে। শনিবার সেখানে নৌকাডুবির ঘটনার পরে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাখিরালয়ে পর্যটকের ভিড় বেশি হয়। জলাশয়ে নৌকা নিয়ে রঙিন পাখিদের ঘোরাফেরা, মাছ শিকার-সহ নানা দৃশ্য উপভোগ করেন তাঁরা। ঘণ্টা প্রতি নির্দিষ্ট ভাড়ায় মাঝিরা কাঠের নৌকায় পর্যটকদের জলাশয়ে নানা জায়গায় পাখি দেখাতে নিয়ে যান। মাঝিদের দাবি, নৌকায় বসে শুধু পাখি দেখলে একটি নিয়ে যাওয়া যায় চার জন যাত্রীকে। নৌকা থেকে ছবি তোলার কাজ করলে নিয়ে যাওয়া যায় দু’জনকে। শনিবার বিকেলে কৃষ্ণনগরের কোতয়ালি থানার চার বন্ধু পাখিরালয়ে এসে একটি নৌকায় ছাড়িগঙ্গায় ঘুরতে বেরোন। ঘাট থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার নদিয়ার দিকে যাওয়ার পরেই তাঁদের নৌকাটি ডুবে যায়। মাঝি-সহ তিন জনকে স্থানীয় মানুষজন উদ্ধার করতে পারলেও, বাকি দু’জনের মৃত্যু হয় জলে ডুবে।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, মাঝি-সহ পাঁচ জনেরই শরীরে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। তবে নৌকায় থাকা টিউবের সাহায্যে প্রাণে বাঁচেন এক জন। ঘাটের আশপাশে কোনও স্পিড বোট না থাকায়, এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয় নৌকা নিয়ে। ফলে, উদ্ধারকাজ শুরু করতেও দেরি হয়। শনিবার রাত থেকে প্রতিবেশী সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে উদ্ধারের জন্য কোতয়ালি থানার বনশ্রীপাড়ার বেশ কিছু বাসিন্দা হাজির ছিলেন ছাড়িগঙ্গার পাড়ে। তাঁদেরই এক জন বিদ্যুৎ ঘোষের দাবি, ‘‘নৌকায় যদি জলে ভেসে থাকার জিনিসপত্র পর্যাপ্ত মজুত থাকত, তাহলে হয়তো এলাকায় পরোপকারী ছেলে হিসেবে পরিচিত সৈকতকে এ ভাবে হারাতে হত না। বহু পর্যটক এখানে আসেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা অসীমউদ্দিন শেখ জানান, দুর্ঘটনার পরে অন্য প্রান্ত থেকে নৌকা নিয়ে পৌঁছতে বেশ কিছু ক্ষণ দেরি হয়। ঘাটে যদি স্পিড বোট থাকত, অনেক দ্রুত পৌঁছে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করা যেত। যে ভাবে মাঝিরা নৌকা নিয়ে পাখি দেখানোর কাজ করেন, তাতে এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য তাই স্পিডবোট রাখা জরুরি পদক্ষেপ।
মাঝিদের অনেকেরই দাবি, পাখিরালয় চত্বরে মদ্যপান নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকেই মত্ত অবস্থায় নৌকায় চড়ে বসেন। কেউ-কেউ জলাশয়ে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরে মদ্যপান শুরু করেন বলে অভিযোগ। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কেউ-কেউ হুল্লোড় শুরু করায় নৌকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসুবিধা হয় বলেও অভিযোগ মাঝিদের। প্রায় ১৯ বছর ধরে ছাড়িগঙ্গায় নৌকা চালানোর কাজ করা জয়ন্ত প্রামাণিকের দাবি, ‘‘মদ্যপান করে কেউ যাতে নৌকায় না ওঠেন, সে জন্য বাড়তি তৎপরতা দেখাতে হবে। বাড়াতে হবে পুলিশি নজরদারিও।’’
পাখিরালয়ে নানা বিষয় দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রদীপ বারুই জানান, কৃষ্ণনগরের চার বন্ধু যে নৌকাটিতে গিয়েছিলেন, তাতে দু’টি লাইফ জ্যাকেট এবং একটি ভাসমান টিউব ছিল। তাঁর দাবি, লাইফ জ্যাকেটের অভাব নেই। তবে নৌকায় ওঠার সময়ে অনেকে লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিলেও, জলাশয়ে কিছুটা যাওয়ার পরে তা খুলে ফেলেন। রঙিন লাইফ জ্যাকেটের জন্য পাখি কাছাকাছি আসবে না, এই অজুহাতেও অনেকে তা গায়ে চড়াতে চান না।
পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পখিরালয়ে চত্বরে যাতে মত্ত অবস্থায় লোকজন ঢুকতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পূর্বস্থলী ২ বিডিও সৌমিক বাগচির বক্তব্য, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। পাখিরালয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে বৈঠক করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy