কল্পনা মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
আসানসোল জেলা হাসপাতালে স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই কর্মরত ছিলেন। মানুষের সেবা করতে গিয়ে দু’জনেই করোনা আক্রান্ত হন। তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও, স্বামী অলোক মুখোপাধ্যায়কে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন কল্পনা। তা সত্ত্বেও শোক চেপে রেখে হাসিমুখে রোগীদের সেবা করে চলেছেন তিনি। সুস্থ করে তুলছেন আরও অনেককে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে চিকিৎসক অলোক মুখোপাধ্যায়-সহ ৩০ জনের বেশি ‘কোভিড যোদ্ধা’ আক্রান্ত হয়েছিলেন। বছর ৫৭-র কল্পনা জানান, কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের তিন বছরের সিনিয়র ছিলেন অলোক। সেখান থেকেই পরিচয়। পরে তাঁরা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ২০০৪-২০০৫ আর্থিক বর্ষে আসানসোলে কাজে যোগ দেন ওই চিকিৎসক দম্পতি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্পনা জরুরি, বহিঃর্বিভাগ, কোভিড থেকে টেলি-মেডিসিন বিভাগের রোগীরদের চিকিৎসা করেন। অবসরের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী অলোক। তিনি ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ (সিসিইউ)-এ ছিলেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি অলোক প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন। তার ঠিক দু’দিন পরে কোভিড পজ়িটিভ আসে কল্পনার। তিনি জানান, ১৮ এপ্রিল দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল অলোককে। তিনি ২০ এপ্রিল অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কল্পনা বলেন, “অলোককে ২১ এপ্রিল সিসিইউ থেকে সাধারণ শয্যায় রাখা হয়েছিল। তার পরের দিন থেকে প্রচণ্ড বুকে ব্যথা হলেও ২৬ এপ্রিলের আগে তাঁকে সিসিইউ-তে ঢোকানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভেন্টিলেশনে ঢোকানোর পরে তাঁর মৃত্যু হয়।” তাঁর আক্ষেপ, “অলোকের কথা শুনে তাঁর বুকে ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিসিইউ-তে ঢোকানো হলে হয়তো তাঁকে চলে যেতে হত না!”
কথা বলতে বলতেই কল্পনা জানালেন, তিনি এবং ছেলেমেয়ে এ বার পুজোয় নতুন পোশাক কেনেননি। শ্বশুরবাড়ির দেড়শো বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজোয় যোগ দেবেন না বলেও ঠিক করেছেন। তিনি শুধু বলেন, “রোগীর সেবা করে যাব। চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হলে, অলোকের মতো কোনও রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই মনযোগী হয়ে সেবা করে যাব। এতেই অলোকের আত্মার শান্তি পাবে বলে মনে করি।”
কল্পনার কাছে টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছেন আমলাজোড়ার নীরাময় খাঁ, আসানসোলের বছর দশেকের বালক নিতাই বাউরি। নীরাময় জানান, গলায় ব্যথা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। নিতাইয়ের জ্বর হয়েছিল। জরুরি বিভাগে পেটে ব্যথা, জ্বর নিয়ে অপর্ণা বাউরি ও জ্বর-কাশির উপসর্গ নিয়ে এসেছিলেন মায়া মুর্মু। তাঁদেরও চিকিৎসা করেন কল্পনা। তাঁর পরিষেবায় পঞ্চমুখ অপর্ণারা। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর শোকে কল্পনা সহকর্মীদের সঙ্গে কার্যত মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছেন। মুখ বুজে শুধু কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা চাই, শোক ভুলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসুক কল্পনা। এটাই প্রার্থনা করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy