Advertisement
E-Paper

চড়ছে দাম, পুষ্টির ঘাটতি মেটাবে কে

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে বরাদ্দ ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০০
Share
Save

ফ্যানভাতের সঙ্গে অর্ধেক ডিম। কিংবা শুধুই খিচুড়ি। তরকারি নেই। কোনও একটি কেন্দ্রের নয়, আপাতত এটাই জেলার বেশির ভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কচিকাঁচাদের পুষ্টিকর খাবার। বর্ধমান শহরের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রাঁধুনি ও সহায়িকার দাবি, “আনাজের দাম অনেক দিন ধরেই নাগালের বাইরে। ডিমের দাম কম ছিল। সে কারণে পুষ্টিতে ঘাটতি হয়নি। কিন্তু এখন ডিমের দামও পাইকারি বাজারে সাড়ে সাত টাকা। খুচরো বাজারে আরও বেশি। কী ভাবে বাচ্চাদের মুখে পুষ্টিকর খাবার দেব?”

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে বরাদ্দ ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টমে (উচ্চ প্রাথমিক) বরাদ্দ ছিল ৮ টাকা ১৭ পয়সা। প্রাথমিকে ৭৪ পয়সা বেড়ে বরাদ্দ এখন হয়েছে ৬ টাকা ১৯ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকে ১ টাকা ১২ বয়সা বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য ‘পরিপূরক পুষ্টিকর খাবারের’ বরাদ্দ বাড়েনি। ২০২২-র ১৫ জুলাইয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে শিশুদের জন্য (৬ বছর পর্যন্ত) বরাদ্দ রয়েছে ৮ টাকা। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্য ৯.৫০ টাকা। আর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য বরাদ্দ ১২ টাকা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই সরকারের নির্দেশ মেনে প্রতিদিন গোটা ডিম শিশু বা গর্ভবতীরা পান না। শিশুদের জন্য সোম, বুধ ও শুক্রবার থাকে স্রেফ ভাত আর গোটা ডিমের ঝোল। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের ওই খাবারের সঙ্গে আলু দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার মেলে অর্ধেক ডিম। কারণ, সে দিন ভাতের বদলে পাতে পড়ে খিচুড়ি। সঙ্গে আলু ও সব্জি।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকদের দাবি, “পুরো খাবারের মূল্য যেখানে আট বা সাড়ে ন’টাকা, সেখানে গোটা ডিমের ঝোল-আলু দেওয়া তো বিলাসিতা। আনাজ তো কেনাই যাচ্ছে না। কী ভাবে ওই টাকায় খাবার তুলে দেব?” তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানির খরচ বাড়েনি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুপ্রতি আনাজে বরাদ্দ ১১ পয়সা। গর্ভবর্তী ও প্রসূতিদের জন্য ২৩ পয়সা।’’ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বলছেন, চড়া বাজারে ওই পয়সায় আলু, আনাজ দেওয়া সম্ভব নয়। আগে সপ্তাহে সাত কেজি আলু লাগত। এখন দু’কেজি আলুতেই কেন্দ্র চালাতে হয়। এখন আবার ডিমের দাম বেড়ে গিয়েছে। ডিম কিনতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি পায় সাড়ে ছ’টাকা। এখন খোলা বাজারে ডিমের দাম পড়ছে প্রায় ৮ টাকা। ঝোল করতে গেলেও তেল-মশলা দিতে হবে, কিন্তু বরাদ্দ নেই।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়িকাদের সব সংগঠনই জানিয়েছে, আগে দু’-তিন মাস আনাজ-ডিম কেনার টাকা বকেয়া থাকত। সেখানে এখন এক মাসের টাকা বকেয়া রয়েছে। তা সত্ত্বেও স্রেফ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালানোর জন্যে প্রত্যেক কর্মী-সহায়িকার মাথায় কয়েক হাজার টাকা দেনা হয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির নেত্রী তানিয়া বেগম বলেন, “আমরা প্রতিটি সিডিপিও-কে জানিয়ে দিয়েছি, গোটা ডিম দেওয়া সম্ভব নয়। হয় ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেব, না হলে অর্ধেক ডিম দেব। সেই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।” তৃণমূলপন্থী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা সংগঠনের রাজ্যের নেত্রী রীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জ্বালানি নেই, মশলা কেনার টাকা নেই। তার উপরে ডিম-আনাজের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, হয় ডিম দিতে পারব না, না হয় অর্ধেক ডিম দেব।”

আইসিডিএস প্রকল্পের জেলার এক আধিকারিক বলেন, “প্রতিটি ব্লকেই বিভিন্ন সংগঠন দাবি জানিয়েছে। আমরা সেগুলি রাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।” রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, কেন্দ্র না বাড়ালে নবান্ন বরাদ্দ বাড়াতে পারবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Anganwadi center Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}