Advertisement
E-Paper

বাংলায় এসে স্মৃতিহারা, কুম্ভ-কথায় ১৫ বছর পর মনে পড়ে গেল সব! বাড়ি ফিরলেন ঝাড়খণ্ডি প্রৌঢ়

প্রকাশ মাহাতো ওরফে অর্জুনের কিছু মানসিক সমস্যা ছিল। ২০১০ সালে কলকাতা থেকে আচমকা উধাও হয়ে যান যিনি। তার পর ওই পুরকর্মীর খোঁজ পায়নি পরিবারও।

prakash

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫০
Share
Save

কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী ছিলেন। মাঝেমাঝে ঝাড়খণ্ডের কোডারমায় বাড়ি যেতেন। কিন্তু হঠাৎই এক দিন কলকাতা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান প্রকাশ মাহাতো ওরফে অর্জুন। ১৫ বছর তাঁর কোনও খোঁজ পায়নি পরিবার। কিছু দিন আগে স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য আবেদনও করেছিলেন স্ত্রী। তার মাঝে হঠাৎ পাওয়া গেল প্রকাশের খোঁজ। স্মৃতিভ্রংশ হওয়া প্রকাশের অতীতের সমস্ত কথা মনে পড়ে গিয়েছে ‘মহাকুম্ভ’ শব্দ শুনে। স্থানীয় মানুষজন এবং পুলিশের সহায়তায় পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের রানিগঞ্জ থেকে ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে ফিরেছেন ৫১ বছরের ওই ব্যক্তি।

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রকাশের মানসিক কিছু সমস্যা ছিল। ২০১০ সালে কলকাতা থেকে তিনি উধাও হয়ে যান। তার পর থেকে পুরসভার ওই সাফাইকর্মীর খোঁজ পায়নি পরিবারও। অতীতের প্রায় সমস্ত স্মৃতি ভুলে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। ওই ভাবে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে এক সময়ে রানিগঞ্জে রানিসায়ের মোড়ে পৌঁছেছিলেন। বেশ কিছু দিন ধরে সেখানকার একটি হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ পান প্রকাশ। নামধাম কিছুই বলতে পারেননি। হোটেলের মালিক সুমিত গুপ্ত প্রকাশের চেহারা দেখে নাম দিয়েছিলেন ‘পালোয়ান’। সুমিত জানান, দিন কয়েক আগে কুম্ভমেলায় যাবেন বলে আলোচনা করছিলেন তাঁরা। ঠাট্টা-তামাশা চলছিল। তখন ‘পালোয়ান’কে মজা করে বলেছিলেন, ‘‘মহাকুম্ভে নিয়ে যাব। তখন আবার হারিয়ে যেও না যেন।’’ তার পরেই ঘটে ‘অদ্ভুত কাণ্ড’।

হোটেলমালিকের দাবি, কুম্ভের কথা শোনার পরে গড়গড় করে নিজের ঠিকানা বলতে থাকেন ‘পালোয়ান’। তিনি বলতে থাকেন, বাড়ি ঝাড়খণ্ড রাজ্যে, জেলা কোডারমা, থানা মারকাচ্ছো এবং গ্রামের নাম কদডিহি। তার পর একে একে নিজের নাম, বাবা, দাদা, স্ত্রী, সন্তান সকলের নাম বলতে থাকেন ‘পালোয়ান’। সুমিত ঝটপট ওই কথাগুলো লিখে নেন। সময় নষ্ট না করে তিনি রানিগঞ্জ থানার পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়ির পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানকার পুলিশ মারকাচ্ছো থানায় যোগাযোগ করে। তার পর আরও তথ্য মেলে।

মারকাচ্ছো থানার সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগে প্রকাশ ওরফে অর্জুনের নামে নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করে পরিবার। এত দিন ধরে তাঁর কোনও খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সকলে ভেবে নিয়েছিলেন প্রকাশ আর বেঁচে নেই। তাই মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন। সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে মাসখানেক আগে কলকাতা পুরসভা থেকেও চিঠি যায় প্রকাশের পরিবারে। জানানো হয়, ওই কর্মীর উপার্জন পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ঠিক তখনই প্রকাশকে পাওয়া গিয়েছে।

আসানসোলে পুলিশ এবং স্থানীয় সমাজসেবী সাধন সিংহের সহায়তায় হোটেলমালিক সুমিত যোগাযোগ করেছিলেন প্রকাশের পরিবারের সঙ্গে। ১৫ বছর পর স্ত্রী গীতা মাহাতো, ১৮ বছরের ছেলে সুজল, ১৬ বছরের মেয়ে রানিকে ফিরে পেয়ে প্রকাশ আনন্দে আত্মহারা। তাঁর মুখে সব শুনে থ বাড়ির লোকজনও। বাড়ি ফেরার সময় প্রকাশ হোটেলের সহকর্মী এবং পরিচিতদের কথা দিয়েছেন, সকলকে নিয়ে কুম্ভে যাবেন। কুম্ভই তো তাঁর সব কিছু ফিরিয়ে দিল। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আংশিক স্মৃতিভ্রংশ থেকে এমন ঘটনা হতেও পারে। কোনও বিষয়, কথাবার্তা যা নিয়ে অতীতে কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেগুলো কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে মনে পড়তে পারে। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় পুরো বিষয়টি শুনে বলেন, ‘‘এটা অনেকটা সিনেমার মতো। আশ্চর্যজনক ঘটনা!’’ বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে, এমন কেউ কোনও শব্দের মাধ্যমে হারানো স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন, সেটা শুনিনি। এ ক্ষেত্রে রোগীর পূর্ব ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেটা না জেনে সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, এর সঙ্গে ‘সোশিয়ো নিউরোলজিক্যাল’ সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। আসলে ঠিক কোন শব্দটি রোগীর মাথায় বিদ্যুতের মতো ঝলক দিয়ে উঠবে তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। হতে পারে হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে তাঁর নিরাপত্তার অভাব বোধ হয়েছে। সেখান থেকেও পূর্বের হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে যেতে পারে। ওই ব্যক্তির আগে থেকে মানসিক সমস্যা ছিল। এ ক্ষেত্রে রোগীদের সাংগঠনিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রাখলেও অনেক সময়ে মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়ে।’’

praksh mahato

বাড়ি ফেরার পথে প্রকাশ মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।

অন্য দিকে, গত বৃহস্পতিবার হোটেলমালিক সুমিতকে বিদায় জানাতে যান প্রকাশ। আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল তাঁর। হোটেলমালিক তাঁর ‘পালোয়ান’কে বলেন, ‘‘মাঝেমাঝে আমাদের কাছে এসো কিন্তু।’’

Kumbh Kumbh Mela 2025 Jharkhand Asansol KMC Kumbh Mela

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}