Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বিপ্লবীদের স্মৃতিমাখা পাতালঘর সংস্কারে ‘বাধা’

১৯১০ সালের ১৮ নভেম্বর ওঁয়ারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বটুকেশ্বর দত্ত। কানপুরে পড়তে গিয়ে বিপ্লবী ভগৎ সিংহ ও চন্দ্রশেখরের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। ১৯২৪ সাল থেকে পুরোদস্তুর জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামে।

বটুকেশ্বর দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি।  নিজস্ব চিত্র

বটুকেশ্বর দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

সাত মাস আগে সংস্কারের টাকা এসেছে। কাজ না হওয়ায় ফিরেও গিয়েছে তার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ। কিন্তু বাড়ির ‘দাবি’ ছাড়তে রাজি নন এক ভোগসত্ত্বাধিকারী। ফলে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে বিপ্লবী ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্তের স্মৃতি বিজড়িত ‘পাতালঘর’ আমজনতার সামনে তুলে ধরা যাচ্ছে না, দাবি প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের কর্তারা ওই ‘দখলদারে’র সম্মতি আদায়ের জন্য একাধিক বৈঠক করেছেন। তাতেও জট কাটেনি।

১৯১০ সালের ১৮ নভেম্বর ওঁয়ারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বটুকেশ্বর দত্ত। কানপুরে পড়তে গিয়ে বিপ্লবী ভগৎ সিংহ ও চন্দ্রশেখরের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। ১৯২৪ সাল থেকে পুরোদস্তুর জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামে। ১৯২৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভগৎ সিংহ ও রাজগুরুর গুলিতে প্রাণ হারান লাহৌরের তৎকালীন সহকারি পুলিশ সুপার জন সন্ডার্স। পরের বছর, ১৯২৮ সালে নিজের গ্রামে ভগৎ সিংহকে নিয়ে আসেন বটুকেশ্বর দত্ত। পড়শি নরেন্দ্রনাথ ঘোষ ও পঙ্কজবালা ঘোষের সাহায্যে তাঁদের বাড়ির ভূগর্ভস্থ ঘরে টানা ১৫ দিন লুকিয়ে ছিলেন তাঁরা। ৯২ বছর পরে সেই ‘পাতাল ঘর’ সংস্কার করতে গিয়েই ওই পরিবারের বর্তমান শরিকের আপত্তির মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসন।

‘দখলদার’ প্রণব ঘোষের দাবি, “ঘর সংস্কার করার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি। হয় বাড়ি করে দিতে হবে, না হলে টাকা দিতে হবে।’’

এই ঘরের মধ্যে দিয়েই ঢোকা যায় পাতালঘরে। নিজস্ব চিত্র

দিন দুয়েক আগেও অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) রজত নন্দা, জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক সৈকত হাজরা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা ওই গ্রামে গিয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। জেলা প্রশাসনের দাবি, প্রণববাবু ছাড়াও আরও তিন ভোগসত্ত্বাধিকারী রয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও দাবিদাওয়া উঠে এলে সমস্যা বাড়বে। সংস্কারের টাকাও নতুন করে চাইতে হবে। তবে আগে বাড়িটা হাতে পেতে হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘বাড়িটি অধিগ্রহণের জন্য পর্যটন বিভাগকে জানানো হবে।’’

বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি ও ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের যুগ্ম সম্পাদক তথা ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশের দাবি, ঘোষ পরিবার সেই সময়ে অত্যন্ত ধনী ছিল। তাঁদের সম্পত্তি রক্ষার জন্যই পাতাল ঘরটি তৈরি হয়। সেখানে যাওয়ার জন্য ঘরের ভিতরে কাঠের আলমারির মতো দেখতে দরজা ছিল। পাশেও একই রকমের দরজা থাকায়, সবাই আলমারি বলেই ভাবত। ব্রিটিশ পুলিশেরও ভ্রম হয়েছিল। সেই সুযোগেই ১৫ দিন ধরে লুকিয়ে ছিলেন ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইতিহাস রক্ষা করতে পর্যটন দফতর ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৮৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮০১ টাকা অনুমোদন করে। প্রথম পর্যায়ের অর্ধেক টাকায় বটুকেশ্বর দত্তের মূল বাড়ি সংস্কার করা হয়। এ ছাড়াও সংগ্রহশালা, গ্রন্থাগার, অতিথিশালা, আবক্ষমূর্তি তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ছ’মাস আগে পাতাল ঘর সংস্কার-সহ আরও কিছু কাজের জন্য বাকি টাকাও পেয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু কাজ না হওয়ায় তা ফেরত চলে যায়।

ওই কমিটি ও ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সম্পাদক মধুসূদন চন্দ্র জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেছেন, ওই ‘দখলদার’কে জমি ও বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও পাতাল ঘর আটকে রেখেছেন তিনি। এর সঙ্গেই ওই ব্যক্তি সাত লক্ষ টাকা, ওই বাড়িতে বসবাসের অধিকার ও দেখভাল করার জন্য তাঁদের নিয়োগ করারও দাবি করেছেন, অভিযোগ তাঁর। তিনি বলেন, “পুনর্বাসন দেওয়ার পরেও এই দাবি মানা কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। এই টানাপড়েনে ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। সর্বজিৎবাবুর পরামর্শে আমরা প্রশাসনকে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি।’’

প্রশাসনের আশ্বাস, সমস্ত পথ নিয়েই আলোচনা করা হবে। ১৮ নভেম্বর বটুকেশ্বর দত্তের জন্মদিন উপলক্ষে মেলা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

History Bhagat Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy