ধৃতেরা যে বাড়িতে ভাড়া ছিল, সেখানে তদন্তে সিআইডি। ছবি: উদিত সিংহ
এক লক্ষ টাকায় বিক্রি হত তিন লক্ষ টাকার ‘জাল নোট’। ‘জাল টাকার বান্ডিলে’ সাদা কাগজ ভরে ‘প্রতারণা’ও করা হচ্ছিল, বর্ধমান শহর থেকে উদ্ধার হওয়া ‘জাল নোটের’ চক্রের তদন্তে নেমে এমনই দাবি পুলিশের। পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড়ের পূর্ব মাঠপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে হানা দিয়ে জাল নোট তৈরির অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মমতাজ খাতুন নামে এক মহিলার পরিচয়ের নথি দিয়ে খাগড়াগড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন বর্ধমানের লোকো মোড়ের গোপাল সিংহ। নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিতেন তিনি। তাঁর সঙ্গেই পুলিশ বৃহস্পতিবার উত্তর চব্বিশ পরগণার বাগদার দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের বিপুল সরকারকে গ্রেফতার করেছে। এই দু’জন টাকা পাচারের ‘এজেন্ট’ ছিলেন বলে পুলিশ মনে করছে। তবে খাগড়াগড়ের ওই ভাড়া বাড়িতে জাল নোট তৈরি হত না অন্য জায়গা থেকে কিনে এনে এখানে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে পাচার করা হত, তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। সিআইডি-র বর্ধমান শাখার আধিকারিকেরাও এ দিন ওই বাড়ি ও এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন।
এ দিন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, একতলা বাড়িটি সিরাজুল ইসলাম নামে এক জনের। তবে তিনি বা পরিবারের কেউ সেখানে থাকেন না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি। বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার পরে গোপাল সিংহের সঙ্গে দুই বয়স্ক মহিলা ও এক যুবতী থাকতেন। তাঁরা এলাকায় সাত-আট মাস ধরে থাকলেও পাড়ায় খুব একটা মিশতেন না। দরজা-জানলাও বন্ধই থাকত।
পড়শিদের দাবি, প্রায় সারা রাত ওই পরিবার জেগে থাকত। রাতে চিৎকার-চেঁচামেচিও হত। কিন্তু ওই বাড়ির ভিতর জাল নোটের কারবার ছিল, তা টের পাননি কেউ। মাঝেমধ্যে গাড়ি, টোটোতে করে পুরুষ, মহিলারা ওই বাড়িতে আসতেন বলেও জানা গিয়েছে। ব্যাগও থাকত তাঁদের সঙ্গে।
এলাকার বাসিন্দা কুমকুম খাতুন, কোহিনুর বিবিদের দাবি, ‘‘ওই বাড়িতে পেয়ারা গাছ আছে। পেয়ারা নিতে পাড়ার বাচ্চারা গেলেও ঢুকতে দিত
না ওঁরা।’’
এ দিন গিয়ে দেখা যায় দুই মহিলা রয়েছেন। তাঁদের একজন নিজের নাম মমতাজ খাতুন জানিয়ে বলেন, ‘‘পাঁচ-ছ’মাস ধরে পরিচারিকার কাজ করছি। কাকা (গোপাল) এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত জানতাম না। আমিও ফেঁসে গেলাম।’’ যদিও স্থানীয় মহিলাদের দাবি, গোপালের সঙ্গে মোটরবাইকে বড় বড় ব্যাগ নিয়ে মমতাজ যাতায়াত করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, মমতাজ এখনও সন্দেহের ঊর্ধেব নন।
বর্ধমান থানার সেকেন্ড অফিসার সঞ্জয় রায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জাল নোটের বিষয়টি নিয়ে মামলা রুজু করেছেন। তিনি জানান, বাইরে থেকে দেখলে বাড়িটি বন্ধ রয়েছে বলে মনে হবে। তল্লাশি চালিয়ে ডান দিকের শেষ ঘরের সামনের বারান্দায় জাল নোট তৈরির উপকরণ দেখতে পান তাঁরা। তল্লাশিতে আমেরিকান ডলার, ডলারের জাল লোগোও উদ্ধার হয়। সিবিআই-সহ একাধিক সংস্থার জাল শংসাপত্র বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
জেলা পুলিশের দাবি, বাজেয়াপ্ত হওয়া সব সামগ্রী ফরেন্সিক বিভাগে পাঠানো হবে। জাল ভারতীয় নোটগুলি শালবনি টাঁকশালে পাঠানো হবে। নকল টাকার বান্ডিলের মধ্যে সাদা কাগজ ভরে ক্রেতাদের প্রতারণা করা হচ্ছিল বলেও জেনেছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy