Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘অনেকের মধ্যে বেঁচে থাকবে ছেলেটা’

মঙ্গলবার ‘গ্রিন করিডর’ করে কলকাতার মিন্টো পার্কের একটি নার্সিংহোম থেকে বছর পঁয়ত্রিশের চিন্ময় ঘোষের নানা অঙ্গ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দান করা হয়।

চিন্ময় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

চিন্ময় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

বাড়িতে প্রায়ই বলতেন, ‘আমার কিছু হয়ে গেলে অঙ্গদান করে দিও। অনেক মানুষের উপকার হবে’। তাঁর সেই ইচ্ছেই রাখল পরিবার।

মঙ্গলবার ‘গ্রিন করিডর’ করে কলকাতার মিন্টো পার্কের একটি নার্সিংহোম থেকে বছর পঁয়ত্রিশের চিন্ময় ঘোষের নানা অঙ্গ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দান করা হয়। মেমারির কদমপুকুর পাড়ের বাসিন্দা চিন্ময়বাবুর স্ত্রী মহাশ্বেতাদেবী বলেন, ‘‘এ বার থেকে সকলের মাঝে বেঁচে থাকবে ও।’’

বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালের কর্মী অমিত বিশ্বাস চিন্ময়বাবুর আত্মীয়। তাঁর দাবি, “চিন্ময় নিজেও দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দেহদানের ব্যাপারে অনেকবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছে। এ চেতনা ওর মধ্যে ছিলই।’’

মেমারিরই এক ওষুধের দোকানের কর্মী ছিলেন চিন্ময়বাবু। তাঁর স্ত্রী মহাশ্বেতাদেবী শিশুদের স্কুলের শিক্ষিকা। একটি ১১ বছরের সন্তান রয়েছে তাঁদের। মেমারিরই একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ওষুধের দোকান থেকে একটি কাজে স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় মায়েরকোলের কাছে একটি হিমঘরের সামনে টোটোর ধাক্কায় পড়ে যান তিনি। মাথায় আঘাত লাগে। মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল হয়ে বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে আনা হয় তাঁকে। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতার ওই নার্সিংহোমে। অস্ত্রোপচারের পরে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। সোমবার সকালে সেখানেই মারা যান তিনি। এর পরেই চিন্ময়বাবুর অঙ্গদানের ইচ্ছের কথা জানান মহাশ্বেতাদেবী। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি পরিজনেরাও। চিন্ময়বাবুর বৌদি অতসীদেবী বলেন, “মহাশ্বেতা ভাইয়ের ইচ্ছের কথা জানানোর পরে আর ভাবিনি আমরা।’’

গত কয়েকদিন ধরে কদমপুকুর পাড় শোকস্তব্ধ। মনমরা হয়ে রয়েছেন চিন্ময়বাবুর বন্ধুরাও। পড়শি পরমেশ্বর শর্মা বলেন, “পুরো পাড়া শোকে ডুবেছে। নিরীহ ছেলেটার এত কম বয়সে এ ভাবে চলে যাওয়াটা মানতে পারছি না। তবে চলে গিয়েও সবার মধ্যে থেকে গেল ও।’’ ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিপ্লব চন্দ্র জানান, বরাবরই শান্ত স্বভাবের ছিল চিন্ময়। কলকাতা থেকে ফেরার পথে চিন্ময়বাবুর দাদা তন্ময়বাবুও বলেন, ‘‘ভাইয়ের মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু ভাই যে আমাদের মধ্যে না থেকেও বেঁচে থাকবে সেটা ভেবে ভালও লাগছে।’’

প্রথমে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি চিন্ময়বাবুর মা, বছর পঁচাত্তরের অমিতাদেবীকে। জানার পরেও মানতে পারেননি তিনি। সবাই বোঝানোর পরে বলেন, “অনেকের মধ্যে আমার ছেলেটা থাকবে, এটা কী কম পাওয়া।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Organ Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy