Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

নজরদারির ফাঁক গলেই নানা অনিয়ম

তবে তার ফাঁক গলেই ধরা পড়ল কিছু-কিছু অনিয়মের ছবি। বারণ সত্ত্বেও প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেললেন কেউ-কেউ। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকাবিহারেও গেলেন অনেকে।

দুর্গাপুর ব্যারাজের কাছে দামোদরে কচিকাঁচাদের নিয়ে নৌকাবিহার লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই। নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুর ব্যারাজের কাছে দামোদরে কচিকাঁচাদের নিয়ে নৌকাবিহার লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১০
Share: Save:

প্রচার চালানো হয়েছে ধারাবাহিক ভাবে। ‘গ্রিন পিকনিক মিশন’ পালনের জন্য নানা বিধিনিষেধ জানিয়ে ব্যানার, বোর্ডও দেওয়া হয়েছে। বড়দিনে জেলার নানা পিকনিকের জায়গায় সেই সব নিয়ম পালনে কড়া নজরদারি চালানো হল প্রশাসনের তরফে। সহযোগিতায় এগিয়ে এল নানা সংগঠনও। তবে তার ফাঁক গলেই ধরা পড়ল কিছু-কিছু অনিয়মের ছবি। বারণ সত্ত্বেও প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেললেন কেউ-কেউ। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকাবিহারেও গেলেন অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন অব্যবস্থার অভিযোগও তুললেন পিকনিকে আসা মানুষজন।

মাইথন

পলিথিন বা থার্মোকলের কোনও সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না মাইথন চত্বরে, ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। নিষিদ্ধ করা হয় নেশার সামগ্রী ও ডিজে বক্সের ব্যবহার। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নজরদারি শুরু করা হয়েছিল। বুধবার মাইথনে ডিজে বক্সের আওয়াজ শোনা যায়নি। উপদ্রব ছিল না প্লাস্টিক-থার্মোকলেরও। তবে মাইথনে ঢোকার রাস্তায় কিছু জায়গায় প্লাস্টিক ছড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

গত বছর মাইথনে নৌকাবিহারের সময়ে নদীতে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। মত্ত অবস্থায় নিজস্বী তুলতে গিয়েই ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। সালানপুর থানার পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে বাইরে থেকে আসা পিকনিকের দলের বেশ কয়েকটি গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মদ ও থার্মোকলের সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সালানপুরের বিডিও তপনকুমার সরকার জানান, পিকনিকে আসা মানুষজনের পরিষেবায় নজর রাখতে পঞ্চাশ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবিরও করা হয়েছে। দিনের শেষে বিডিও বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশিকা মেনেছেন সকলেই। এ বার তাই মাইথনে কোনও অভিযোগ মেলেনি।’’

যদিও অনেকে অভিযোগ করেন, পিকনিকের জায়গা বেশ অপরিচ্ছন্ন। শৌচাগারগুলিতে জলের সমস্যা রয়েছে। মোটরবাইকে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে কুড়ি টাকা করে প্রবেশমূল্য নেওয়া হয়েছে। আরও বেশি সাফাই এবং এই প্রবেশমূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও।

দুর্গাপুর ব্যারাজ

প্রতি বছরই পিকনিকের মরসুমে ছুটির দিনগুলিতে ডিজে বক্সের চড়া শব্দে কান পাতা দায় হয় দুর্গাপুর ব্যারাজে। এ বার তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন ব্যারাজে সেই রকম চড়া আওয়াজ ছিল না। প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালা-বাটি ব্যবহারেও মানা ছিল। পিকনিকে আসা মানুষজনকে শালপাতার থালা-বাটি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। অনেকে বাড়ি থেকে বাসন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। ডিএসপি টাউনশিপ থেকে আসা স্নেহময় বন্দ্যোপাধ্যায়, রামানুজ রায়েরা বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বাসনপত্র নিয়ে এসেছি। পরিবেশ দূষণ তো দূর, এঁটো শালপাতা পড়ে থাকার সম্ভাবনাও থাকছে না।’’

পিকনিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা নিয়ম করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন দুর্গাপুর পুরসভার ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে রয়েছে নৌকাবিহারের সময়ে লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে এবং নিজস্বী তোলা চলবে না। নিষেধাজ্ঞার কথা লেখা ব্যানারও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ দিন সে সব নিয়মকে পিকনিকে আসা মানুষজন বিশেষ তোয়াক্কা করেননি বলে অভিযোগ। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়তে দেখা গিয়েছে অনেককেই। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাসেবীরা নজরদারি চালিয়েছেন। অনুরোধ করা সত্ত্বেও কেউ-কেউ নিয়ম ভেঙেছেন।’’

দেউল পার্ক

ইছাই ঘোষের দেউলকে কেন্দ্র করে কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের গৌরাঙ্গপুরে গড়ে উঠেছে এই পর্যটন কেন্দ্র। এক পাশে অজয় নদ, অন্য দিকে জঙ্গল। শীত পড়তেই বহু মানুষ আসেন পিকনিক করতে। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে দেউলে। কিন্তু এলাকা অপরিচ্ছন্ন হওয়ার অভিযোগও ওঠে প্রতি বার। থার্মোকলের জিনিসের ব্যবহার, ডিজে বক্সের শব্দে অতিষ্ঠ হন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাঁরা জানান, দেউল পার্কের অদূরে ঘেরা জঙ্গলে রয়েছে প্রচুর হরিণ ও ময়ূর। চড়া শব্দে বন্যপ্রাণীদেরও সমস্যা হয়।

বছর দুয়েক ধরে সাউন্ডবক্সে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ দিন পিকনিকে আসা নানা দলকে বক্স নিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে থার্মোকলের ব্যবহারও। সচেতনতার বার্তা দিতে বনকাটি পঞ্চায়েতের কর্মীদের পাশাপাশি ছিলেন দুর্গাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরাও। এক সদস্য জানান, বিভিন্ন পিকনিকের জায়গায় গিয়ে তাঁরা প্লাস্টিক ও থার্মকলের ক্ষতিকর দিক এবং ডিজে বক্সের দূষণ নিয়ে মানুষকে সচেতন করেন। এ দিনও ডিজে বক্স নিয়ে আসা লোকজনকে তা বাজাতে নিষেধ করেন তাঁরা। বনকাটি পঞ্চায়েতের প্রধান পিন্টু বাগদি বলেন, ‘‘দেউলকে সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করছি। মানুষজনকেও সচেতন করছি।’’ পিকনিকে এসে অজয়ে স্নানে নেমে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে আগে। সে কারণে এ দিন কাঁকসা থানার তরফেও নজরদারি চালানো হয়। প্রশাসনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান বাঁকুড়া থেকে আসা রোহিত পাতর, অনিমা পাতরেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Picnic Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy