Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
INTTUC

অশান্তির নেপথ্যে কি ‘দ্বন্দ্ব’, জল্পনা

কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও তাঁর অনুগামীদের ঢোকাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ধুন্ধুমার বাধে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার বেসরকারি কারখানা চত্বরে

ডান দিকে: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বাঁ দিকে:  আইএনটিটিইউসি-র ‘কোন্দলে’র জেরে এই ঘটনা কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।  নিজস্ব চিত্র

ডান দিকে: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। বাঁ দিকে: আইএনটিটিইউসি-র ‘কোন্দলে’র জেরে এই ঘটনা কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০৪:১৩
Share: Save:

কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও তাঁর অনুগামীদের ঢোকাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ধুন্ধুমার বাধে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার বেসরকারি কারখানা চত্বরে। ঘটনার পরে সংগঠনের নেতা, কর্মীদের একাংশ এবং দুর্গাপুরের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত লোকজনের একাংশের অনুমান, এর নেপথ্যে রয়েছে সংগঠনের বর্তমান ও প্রাক্তন জেলা সভাপতির দ্বন্দ্ব।

যদিও এ দিন গোলমাল কারা করেছেন, সে বিষয়ে ‘স্পষ্ট’ করে কারও নাম উল্লেখ করেননি বিশ্বনাথবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘স্থানীয়দের বঞ্চিত করে অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। কারখানাকে সামনে রেখে লুট চলছে। দুর্গাপুরের মানুষ জানেন, কারা পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর পরেই তাঁর সংযোজন: ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে যাঁরা চ্যালেঞ্জ করছেন, তাঁরা দল বা সংগঠনের কেউ হতে পারেন না। মনে রাখবেন, সঙ্গে দল না থাকলে অস্তিত্ব থাকবে না।’’

জেলা সভাপতির এই মন্তব্যের পরে তাঁর ইঙ্গিত সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীদের দিকেই কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে আইএনটিটিইউসি-র অন্দরে। যদিও প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘দলের নির্দেশে ত্রাণের কাজে সুন্দরবনে রয়েছি। কোথায়, কে, কী বলল, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ তবে, প্রভাতবাবুর অনুগামী হিসেবে সংগঠনের অন্দরে পরিচিত কারখানার আইএনটিটিইউসি নেতা অবিনাশ ঘোষ বলেন, ‘‘কারখানার ভিতরে লাঠি নিয়ে বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের অনুগামীরা চড়াও হন। আমাদের মারধর করা হয়।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্বনাথবাবুর অনুগামীরা।

কেন এমন ‘দ্বন্দ্ব-জল্পনা’? সংগঠনের নেতা, কর্মীদের একাংশের মতে, এমন মনে হওয়ার কারণ বিশ্বনাথবাবুর মন্তব্য এবং গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক ঘটনাক্রম। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুরের দু’টি বিধানসভা আসনেই ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এর অন্যতম কারণ, শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ‘দুর্বলতা’। এই পরিস্থিতিতে দল ও আইএনটিটিইউসি-র সব কমিটিই ভেঙে দেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ২০১৮-র জুনে তৃণমূল ‘ঘনিষ্ঠ’ কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথবাবুকে সংগঠনের জেলা সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিশ্বনাথবাবু এ দিন মমতার ‘সিদ্ধান্ত’ এবং তা ‘চ্যালেঞ্জ’ করার যে কথা বলেছেন, তা প্রভাতবাবুকে ইঙ্গিত করেই বলে সংগঠনের একাংশের মত। কারণ, সংগঠনের জেলা সভাপতি হিসেবে বিশ্বনাথবাবুর নাম ঘোষণার পর থেকেই নানা ঘটনায় তাঁর সঙ্গে প্রভাতবাবুর ‘মতবিরোধ’ প্রকাশ্যে আসে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও দুর্গাপুরে দলের ভরাডুবির পরে, বেশ কিছু দিন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বিশ্বনাথবাবুকে। সেই সময়ে আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল প্রভাতবাবুকে। তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসে মমতা জানান, দলের শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব সামলাবেন বিশ্বনাথবাবু। প্রভাতবাবুকে শ্রমিক সংগঠনের বিষয়ে না ঢোকার ‘পরামর্শ’ দেন নেত্রী। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি যে বদলায়নি, এ দিনের ঘটনা তার প্রমাণ বলে মত সংগঠন এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতা, কর্মীদের একাংশের।

ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘দু’পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই ঘটনা। দু’পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা মেটানো হবে।’’ কারখানার সিটু সংগঠনের সভাপতি পঙ্কজ রায়সরকারের কটাক্ষ, ‘‘৬০-এর দশকে তৈরি হওয়া এই কারখানায় ২০০৬-এ প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সম্প্রসারণ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে সব। এর পরে আর কোনও শিল্প দুর্গাপুরে আসবে?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy