E-Paper

প্ল্যাটফর্মে পড়ে রইলেন রক্তাক্ত যুবক

স্থানীয় কয়েক জনের দাবি, দুর্ঘটনার পরেই আরপিএফ ও স্টেশন ম্যানেজারকে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জখম রেলকর্মীর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি অন্য রেলকর্মীদের।

দেবীপুর স্টেশন।

দেবীপুর স্টেশন। —ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫২
Share
Save

প্ল্যাটফর্মে পড়ে ছটফট করছেন ৩৬ বছরের এক যুবক। তাঁর গোটা শরীর রক্তে ভাসছে। লাইনেও রক্তের ছাপ স্পষ্ট। তাঁকে কয়েক জন ঘিরে থাকলেও সাত কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যাননি কেউ। প্রায় এক ঘণ্টা কার্যত মৃত্যুমুখে পড়েছিলেন তিনি। পরে তাঁর পরিবারের লোকজন এলে আরপিএফের জওয়ানেরা তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। বুধবার রাতে এমনই অমানবিক ছবি দেখা গেল পূর্বরেলের বর্ধমান-হাওড়া (মেন) শাখার দেবীপুর স্টেশনে। সূত্রের খবর, জখম রবীন্দ্রনাথ মুর্মুর বাড়ি হুগলির পোলবায়। তিনি রেলেরই কর্মী। আরপিএফের অনুমান, ট্রেনে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বাঁ হাতটি কাটা পড়েছে ট্রেনের চাকায়, খবর হাসপাতাল সূত্রের।

আরপিএফ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট নাগাদ ডাউন লাইনে, ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মের ফাঁক গলে লাইনে পড়ে যান রবীন্দ্রনাথ। তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন কয়েক জন। তাঁরা দেখেন, প্ল্যাটফর্ম আর লাইনের মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন ওই যুবক। তাঁর বাঁ হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। কানে গোঁজা ছিল হেডফোন। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে বাঁ হাতে শক্ত করে গামছা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে তাঁকে প্লাটফর্মে তোলা হয়। স্টেশন থেকে সাত কিলোমিটার দূরে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল। কিন্তু আরপিএফের জওয়ানেরা না আসা পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথকে পড়ে থাকতে হয়েছিল প্ল্যাটফর্মেই। অনেকেই তাঁকে ঘিরেছিলেন। কিন্তু কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। এখন তিনি বর্ধমানের বাম এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় কয়েক জনের দাবি, দুর্ঘটনার পরেই আরপিএফ ও স্টেশন ম্যানেজারকে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জখম রেলকর্মীর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি অন্য রেলকর্মীদের। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁরই মোবাইল থেকে ফোন করে খবর পাঠানো হয় তাঁর বাড়িতে। জখমকে ঘিরে থাকা লোকজন দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। নানা মন্তব্যও করেতে শোনা যায় অনেককে। কেউ বলছিলেন, ‘‘রেলের কোনও পরিকাঠামো নেই। দুর্ঘটনার পরে দ্রুত রেল পুলিশ বা রেলকর্মীদের এসে জখমকে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।’’ কেউ আবার বলেছিলেন, ‘‘রেল অমানবিক আচরণ করছে।’’ অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষ নিজের কর্মীর ব্যাপারেই উদাসীন।’’

প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে আরপিএফ, রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। মেমারি থানা খবর পেয়ে জখমকে উদ্ধারের জন্যে গাড়ি পাঠানো হয়। সাড়ে ৮টা নাগাদ বর্ধমানগামী একটি ট্রেনে আসেন জখমের পরিজনেরা। আরপিএফ সূত্রের খবর, সেই ট্রেনেই রবীন্দ্রনাথকে তোলা হয়। জওয়ানরা তাঁকে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। আরপিএফের এক আধিকারিক বলেন, “বর্ধমান বা শক্তিগড় থেকে দেবীপুর যেতে আমাদের সময় লেগেছে। এর মধ্যে আমাদের যাঁরা ফোন করেছিলেন, তাঁদের বার বার বলা হয়েছিল, তাঁরা যেন দ্রুত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। জখমকে বাঁচানোই প্রথম কাজ। আমাদের অনুরোধ তাঁরা রাখেননি। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আগে একটি ঘটনায় স্থানীয় কয়েক জনের বিরুদ্ধে আরপিএফ মামলা করেছিল। আদালত থেকে জামিন নিতে হয়েছিল তাঁদের। সেই ভয়েই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি কেউ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।