Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
shelter home

হোমে নির্যাতনের নালিশ দুর্গাপুরে

তাঁদের আরও দাবি, বিষয়টি নিয়ে বারবার বলা হলেও হোম কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪৭
Share: Save:

‘অটিস্টিক’ ছেলেকে নিগ্রহ করার অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জানানোয় তাঁর ছেলেকে বহিষ্কার করা হয়। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছেন হুগলির শ্রীরামপুরের এক দম্পতি। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘ওই দম্পতি থানায় গিয়ে এফআইআর করুন। যদি কোনও সমস্যা হয়, আমায় জানালে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।’’

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের ওই হোম দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জ়োনের হর্ষবর্ধন রোডে অবস্থিত। ২০০১-এ হোমটি চালু হয়। হোম সূত্রে খবর, বর্তমানে ৪৮ জন আবাসিক রয়েছে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের সরকারি অনুমতিও রয়েছে। সে জন্য জনশিক্ষা দফতর থেকে স্কুলের পোশাক, জুতো, টিফিন বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, অভিভাবকদের কাছ থেকেও ‘ফি’ নেওয়া হয়।

শ্রীরামপুরের ওই দম্পতি জানান, তাঁদের ছেলেকে আট বছর বয়সে ২০১১-র অগস্টে ওই হোমে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের দাবি, প্রায় সাত বছর কোনও সমস্যা হয়নি। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে ছেলেটির বাবা জানিয়েছেন, ২০১৮-র ২৩ মার্চ তাঁর ছেলেকে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে একটি খাঁচার মধ্যে পোশাক ছাড়া অবস্থায় রাখা হয়। ওই ছেলেটি তাঁর ছেলেকে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। প্রথমে তার চিকিৎসা করানো হয়নি। তাঁদের পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসককে দেখানো হয়। তাঁর দাবি, ‘‘ছেলেকে জলাতঙ্কের টিকা দিতে হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে ছেলে ট্রমার মধ্যে ছিল।’’

অভিযোগে তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০১৮-র ১৮ জুন খাট থেকে পড়ে যায় তাঁর ছেলে। কপালে সেলাই করাতে হয়। ওই বছর ১০ অক্টোবর সিসি ক্যামেরার নজরদারির বাইরে নিয়ে গিয়ে কর্মীরা তাঁর ছেলেকে মারধর করেন। শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাঁরা পরে তা বুঝতে পারেন। কিন্তু সে বারও হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের কিছু জানাননি বলে অভিযোগ।

তাঁদের আরও দাবি, বিষয়টি নিয়ে বারবার বলা হলেও হোম কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি। পরে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানানোয়, ২০১৯-র ১২ এপ্রিল হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের ছেলেকে বহিষ্কারের নোটিস দেন। বাধ্য হয়ে ছেলেকে তাঁরা বাড়ি নিয়ে যান। ওই দম্পতি বলেন, ‘‘ছেলেকে দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে কাটাতে হয়েছে। আমরা চাই, আর কারও যেন এই পরিস্থিতি না হয়।’’

দম্পতির দাবি, ‘‘আইন অনুযায়ী হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত। থানাতেও গিয়েছিলাম। প্রশাসনের দোরে দোরেও ঘুরেছি আমরা। বহু জায়গাতেই দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগের সুরাহা করার জন্য তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি কোনও দফতর থেকে।’’

ওই হোমের সম্পাদক পাপিয়া মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই ছেলেটিকে যে কামড়ে দিয়েছিল, সে দৃষ্টিহীন। যেহেতু আক্রান্ত চিৎকার করতে পারে না, তাই কর্মীরা প্রথমে তা বুঝতে পারেননি। রাজ্য প্রতিবন্ধী কমিশনারের কাছে শুনানিতেও এই ঘটনায় দায় আমরা স্বীকার করেছি। সে জন্য আমাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু কখনই মারধর করা হয়নি।’’

হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, বাকি আবাসিকদের অভিভাবকদের কোনও অভিযোগ নেই। পাপিয়াদেবী বলেন, ‘‘ওই বাচ্চাটি সাত বছর ধরে আমাদের সঙ্গে ছিল। যা হয়েছে সে জন্য আমরা অনুতপ্ত।’’ তাঁর দাবি, হোমে কখনও খাঁচা ছিল না। বাচ্চারা খুব ‘হাইপার’ হলে তখন কিছুক্ষণের জন্য একটি আলাদা ঘরে রাখা হয়। সেই ঘরের দরজায় আগে গ্রিল ছিল। প্রশাসনের পরামর্শে সেই গ্রিল সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরটিকে আরও সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এখনও সেই অভিযোগের তদন্তে সরকারি আধিকারিকেরা হোমে আসছেন বলে জানিয়েছেন পাপিয়াদেবী।

অন্য বিষয়গুলি:

shelter home Durgapur harassment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy