বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে সস্ত্রীক রাজ্যপাল— নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব বর্ধমান সফরে এসে সোমবার জেলার দু’টি ঐতিহ্যশালী মন্দিরে সস্ত্রীক পুজো দিলে রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড়। প্রথমে ১০৮ শিবমন্দিরে। এরপর সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। তবে দেবদর্শনের এই সফরেও রাজনীতির ছোঁয়া এড়াতে পারেননি তিনি।
সোমবার ধনখড় বলেন, ‘‘দু’টি ঐতিহাসিক পুজো দিলাম। রাজ্যবাসীর সুখের জন্য প্রার্থনা করেছি। পশ্চিমবঙ্গের একটা সুনাম আছে। ২০২১ সাল সকলের কাছে ভালো হোক। বিধানসভা নির্বাচনে যেন হিংসা না হয়, এই আশা করি।’’ বর্ধমান সার্কিট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের সমালোচনাও করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘খুব খুশি হয়েছি আজ। প্রথম যেবার এসেছিলাম এখানে তৎকালীন জেলাশাসক বিজয় ভারতী এসেছিলেন। দু’টো মিষ্টি খেয়েছিলাম। ব্যক্তি জগদীপ ধনখড় নন, রাজ্যপালকে অসম্মান মানে সিস্টেমের অপমান। ডায়মন্ড হারবারে রাজ্যপালকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে উত্তর চেয়েছি। সংবিধান রক্ষার এবং জনতার সেবা করার শপথ নিয়েছি। সবচেয়ে বেশি আন্দামান নিকোবরে বাঙ্গালিরা বন্দি ছিলেন। বটুকেশ্বর দত্ত এখানকার সন্তান। জালিওয়ানাবাগের ঘটনায় কবিগুরু উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। আজ কিছু লোক সংবিধানের আত্মাকে মানেন না। বহিরাগত বলা হয়, অন্য রাজ্য থেকে এলে। এর নিন্দা করছি।’’
তাঁর নিশানাও স্পষ্ট করেছেন রাজ্যপাল। বলেন, ‘‘আমার সংকেত মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। এই কার্যকলাপ আমাকে দুঃখ দেয়। এই বাংলার বিবেকানন্দ সারা বিশ্বকে অভিভূত করেছিলেন। সব দিক থেকে এগিয়ে এই এলাকা। রাজ্যকে কেন্দ্র আমফানে সাহায্য করেছে। সেই ত্রাণ বিলি করাতেও অনিয়ম হয়েছে। পাকা বাড়ির মালিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এতেও চুরি? দুর্গত মানুষের সহায়তায় বেনিয়ম? এই ধরণের ভুলের তদন্ত হওয়া উচিত। মহামারির সময়েও ঠিক কাজ হয়নি। ভুলের উপর আবরণ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের অখণ্ডতাকে লঘু করার প্রয়াস চলেছে।’’
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ধনখড় সোমবার বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত যতগুলি প্রশ্ন করেছি তার কোনও রিপোর্ট পাইনি। এই রিপোর্ট চাওয়া উচিত মিডিয়ার। সিন্ডিকেট রাজ চলছে। আইনের রাজনীতিকরণ হচ্ছে। একজন সরকারি ব্যক্তি রাজনীতির কাজ করতে পারেন না। সংবাদমাধ্যম চুপ করে থাকলে খারাপ লাগে। রাস্তার হাল কী আপনার জানেন। এখানে গণবন্টন ব্যবস্থারও রাজনীতিকরণ হয়েছে।’’
রাজ্যপালের অভিযোগ, ‘‘বালি, পাথর কয়লায় স্লিপ চালাচ্ছে সিন্ডিকেট। এটা মাফিয়াগিরি। এই টাকা, এই রসিদের টাকা কোথায় যায়, সব বেরোবে। আইনের হাত লম্বা নয় যাঁরা ভাবেন, তারা অচিরেই বুঝতে পারবেন। নীচের তলার পুলিশ চাপের জন্য এ কাজ করতে বাধ্য হন। কঠোর পরিশ্রম করেও তাদের চাপে পড়তে হয়। দুর্নীতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে।’’
কেন্দ্রের বিধি এখানে কার্যকর হয়নি বলেও অভিযোগ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কৃষকেরা গোটা দেশে সরাসরি ১৪ হাজার টাকা পান। বাংলার ৭০ লক্ষ কৃষক এই সহায়তা পাননি। ৯,৮০০ কোটি টাকা পাননি এ রাজ্যের মানুষই। মিডিয়া কেন তোলেনি এ প্রসঙ্গ? এটা একটা অনুদান। ব্যারাকপুর কমিশনারেটে কী হয়েছে? কোর্টে যাবার জন্য সেখানে নোটিস দেওয়া হচ্ছে। আমি ডিজি-কে ডেকেছিলাম। এটা রাজ্যে আইনের না থাকার সমান। আইনের শাসন যাতে চলে দেখা আমার দায়িত্ব।’’
রাজ্যপাল সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের তাঁর সঙ্গে দেখা না করার প্রসঙ্গে বলেন, ‘দু’-চারজন ছাড়া বাকি উপাচার্যেরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। উপাচার্যদের সমস্যা আমি বুঝি। শিক্ষামন্ত্রীর অসাধারণ ক্ষমতা আছে উপাচার্য-সহ গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে রাখার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy