কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। সেই তালা খুলেছে কিছু দিন আগে। কিন্তু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না। ফলে, থমকে গিয়েছে প্রশাসনিক কাজকর্ম। ফাইলে বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নানা অনুমোদনের প্রস্তাব। শিক্ষকদের পেনশনের কাগজপত্র তৈরি করা থেকে পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তুতি, জাতীয় শিক্ষানীতির প্রয়োগ থেকে নজরুলের জন্মভিটে সংরক্ষণের কাজকর্ম, সবই থমকে রয়েছে মাঝপথে। কী ভাবে সে সব কাজ এগোনো যাবে, ভেবেই পাচ্ছেন না— দাবি আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কত দিন এই অচলাবস্থা চলবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক জন শিক্ষকের পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করার জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতর নির্দেশ পাঠিয়েছে। সে সবের জন্য আলোচনা করে উপাচার্যের অনুমোদনের স্বাক্ষর প্রয়োজন। তা না হলে দুর্ভোগে পড়বেন ওই সব শিক্ষকেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সিমেস্টারের ফল প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু উপাচার্য সই করে চূড়ান্ত ছাড়পত্র না দিলে তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সময়ে ফল না বেরোলে বিপদে পড়বেন পড়ুয়ারা। তাতে আর এক প্রস্ত পড়ুয়া বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের।
সারা বছরই গবেষণা সংক্রান্ত নানা কাজকর্ম চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণারত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত নানা বিষয়ে অনুমোদন প্রয়োজন হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা-ও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। উপাচার্যকে না পেয়ে শিক্ষার্থীরা এ সব সমস্যা নিয়ে নিয়ামকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু সমাধানের উপায় মিলছে না। নিয়ামক চন্দন কোনার বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে। জানি না কী ভাবে মিটবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার জন্য দেশের ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছ’টি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চল জ়োনে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, সিকিম ও আন্দামান-নিকোবরকে যুক্ত করা হয়েছে। এখানকার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুমোদিত কলেজগুলিতে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োগের যাবতীয় কার্যকলাপ কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে হবে বলে ইউজিসি-র তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের বিষয়। কিন্তু প্রশাসনিক কাজ করতে পারছি না বলে এই সংক্রান্ত পরবর্তী পদক্ষেপ থমকে আছে।”
নজরুল ইসলামের জন্মভিটা চুরুলিয়ার উন্নয়ন ও কবির ব্যবহৃত সামগ্রীর সংগ্রহশালাটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণের জন্য রাজ্য সরকার প্রায় দু’কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। জেলাশাসকের দফতরে সেই টাকা এসে গিয়েছে। কাজ শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্র প্রয়োজন। জেলাশাসকের দফতর থেকে সে জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক কাজ করতে না পারায় এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বলে দাবি উপাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘সময়ে কাজ শুরু না হলে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ওই অনুমোদন দীর্ঘদিন ফেলে রাখা সম্ভব নয়।’’ উপাচার্যই দৈনন্দিন খরচের অনুমোদন করেন। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না পারায় সে কাজে ভাটা পড়ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি।
বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের হুঁশিয়ারি, নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে। সেক্ষেত্রে আগামী দু’মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম থমকে থাকবে বলে আশঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে আধিকারিকদের অনেকেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy