E-Paper

কাঁকসায় চার মাসে ছ’বার বনে আগুন

পানাগড় দমকল দফতরের কর্মী শিশির ক্ষেত্রপাল জানান, এ বছর জঙ্গলে এমন আগুন লাগার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে।

ধোঁয়ায় ঢেকেছে কাঁকসার জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

ধোঁয়ায় ঢেকেছে কাঁকসার জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০৮:৩৫
Share
Save

ঘন-ঘন আগুন লাগছে কাঁকসার জঙ্গলে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বন দফতর থেকে সাধারণ মানুষ। নজরদারি, সচেতনতা কিছুই সে ভাবে কাজে আসছে না বলে পর্যবেক্ষণ ওয়াকিবহাল মহলের। পর পর এ ভাবে অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে কোনও অসাধু চক্র জড়িত কি না, উঠছেসে প্রশ্নও।

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে যে জঙ্গলমহল তার একাংশ রয়েছে কাঁকসায়। শাল, পিয়াল, মহুয়া-সহ নানা রকম গাছ রয়েছে সেই জঙ্গলে। তা ছাড়া বন দফতর সোনাঝুরি, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি গাছ লাগিয়েছে। জঙ্গল যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে জীবজন্তুর সংখ্যাও। কিন্তু প্রতি বছর মূলত গ্রীষ্মের সময় জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বন দফতর দমকলের সহায়তায় আগুন নেভায়। কেউ যাতে অসাবধানে বনের ভিতরে গিয়ে আগুন না জ্বালান বা ধূমপান করতে গিয়ে জ্বলন্ত দেশলাই যাতে জঙ্গলে না ফেলেন, এ সব বিষয়ে সতর্কতা প্রচার করা হয়।

কিন্তু তার পরেও এ বার অন্য বছরের থেকে যেন বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি। গত ২২ এপ্রিল পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কের ধারে শালের জঙ্গলে ভয়াবহ আগুন লাগে। দমকলের একটি ইঞ্জিন এবং বনকর্মীরা যৌথ ভাবে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লেগেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। প্রসঙ্গত, আগুনের শিখা কম থাকলে ‘ফায়ার ব্লোয়ার’ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু তা বেশি হলে দমকল ডাকা হয়।

পানাগড় দমকল দফতরের কর্মী শিশির ক্ষেত্রপাল জানান, এ বছর জঙ্গলে এমন আগুন লাগার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। বন দফতরের বর্ধমান বিভাগের পানাগড় রেঞ্জের আধিকারিক বিপদতারণ মুখোপাধ্যায়ও জানাচ্ছেন, গত চার মাসে প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার জঙ্গল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। জঙ্গলের জীবজন্তুরা বিপদের মুখে পড়ছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত পাঁচ-ছ’বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

কেন বার বার এমন ঘটছে? জানা গিয়েছে, আগুন নেভার পরে পোড়া গাছের গুড়ি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেউ বা কারা। তা বিক্রি হচ্ছে মোটা টাকায়। বন দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাল, মেহগনি, সোনাঝুরির মতো মূল্যবান গাছ জঙ্গলের যে যে অংশে রয়েছে সেখানেই আগুন বেশি করে লাগছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রেমগঞ্জ এলাকা থেকে এক জনকে আটকও করা হয়। তবে কে বা কারা আগুন লাগানোর পিছনে রয়েছে তা জানতে পারছে না বন দফতর।

এ দিকে, বন দফতরের দুর্গাপুর ডিভিশন সূত্রেই জানা যাচ্ছে, যে কোনও জেলায় মোট ভৌগোলিক আয়তনের অন্তত ২২ শতাংশ বনাঞ্চল হওয়া দরকার। সেখানে পশ্চিম বর্ধমানে বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র চার শতাংশ। অথচ, ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছে, শুধু কাঁকসা নয়, জেলার বিভিন্ন বনাঞ্চলে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত ৩০টি অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরে বারাবনির পানুড়িয়া ও হোশেনপুড়ার বনাঞ্চলে অগ্নি সংযোগ এবং কাঠ চুরির অভিযোগসামনে আসে।

এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় ওয়াকিবহাল মহল। পানাগড় বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে রমেশ মণ্ডল বলেন, “জঙ্গলে আগুন যাতে না লাগানো হয়, সে জন্য ধারাবাহিক ভাবে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে-গ্রামে প্রচার চালানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এই প্রবণতা আটকানো যাচ্ছে না।” বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, জঙ্গলে যেমন পাহারা ও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে তেমনই নজর রাখা হচ্ছে সংলগ্ন কাঠকলগুলিতেও। কোনও ভাবে জঙ্গলের চোরাই কাঠ কাঠকলে পৌঁছচ্ছে কি না তা দেখা হচ্ছে। ডিএফও (বর্ধমান) নিশা গোস্বামী বলেন, “আমরা লাগাতার প্রচার চালাচ্ছি। পাশাপাশি, নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Wildfire Kanksa Forest department

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।