কার্জন গেট চত্বরে আলু চাষিদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর অনুমতির দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন আলু চাষি ও প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তারা। বর্ধমানের কার্জন গেটের সামনে জিটি রোডের উপরে আলু ছড়িয়ে আন্দোলন চলে মঙ্গলবার। পরে জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ারের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাঁচ জনের এক প্রতিনিধি দল দেখা করেন। জেলাশাসক তাঁদের জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি পাঠিয়ে দেবেন। পরে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘রাজ্যে আলুর দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি। অথচ আমাদের রাজ্য আলু উৎপাদনে দ্বিতীয়। বাজারে দাম আরও কিছুটা কমানো গেলে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে আলু বাইরে পাঠাতে পারব।’’
এ দিন বৃষ্টির মধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জেলার আলু চাষিরা একজোট হয়ে বর্ধমানে আসেন। বীরহাটা থেকে মিছিল করে কার্জন গেটে জড়ো হন তাঁরা। বিক্ষোভ দেখানোর পরে জেলাশাসকের দফতরের দিকে এগোতে গেলে পুলিশ ‘বাধা’ দেয়। একপ্রস্থ উত্তেজনা তৈরি হয়। চাষি ও আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, চাষির ঘরের ছেলেরাই এখন আলু ব্যবসায়ী। তাঁরা স্থানীয় বাজারে আলু বিক্রি করছেন, ভিন্ রাজ্যেও আলু পাঠাচ্ছেন। বর্ধমান থেকে বিহার-ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশে আলু পাঠানোটা চিরাচরিত রেওয়াজ। তা আটকে গেলে চাষিদের কাছ আলু কিনবেন না ব্যবসায়ীরা। উৎপাদিত ফসলের দামও মিলবে না। চাষিরাও আলু চাষে উৎসাহ হারাবেন।
নবান্ন সূত্রে খবর, কৃষকের কাছে এখন ১০ শতাংশ আলু পড়ে আছে। বাকি আলু ব্যবসায়ীদের কাছে। সে দিক থেকে বাইরে পাঠানোর একটা চাপ আছে। তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আজ বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বেচারাম মান্না ও প্রদীপ মজুমদারের।
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এই দাবিতে কর্মবিরতির পথে গিয়েছিল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠন। দু’দিন পরে কৃষি বিপণন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়। কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়। সে দিনই মন্ত্রী সংগঠনের নেতাদের ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর বিষয়টি সরকার দেখবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। ট্রাক ফিরিয়ে এনে ফের হিমঘরে আলু মজুতও করতে হচ্ছে। ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, “২০১৪ সালেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। তারপরে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম আমাদের জেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে গিয়ে আলু চাষ করে ফেলল। এ বারও একই পরিস্থিতি। বিহার-ঝাড়খণ্ড চাষ শুরু করে দিলে পুরো ব্যবসা মার খাবে। আলু চাষিরাও বিপর্যস্ত হবেন। অভাবী বিক্রি বাড়বে।” এ সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠাতে না পারলে ফের কর্মবিরতি হবে, দাবি তাঁদের।
সংগঠনের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে মূলত জলদি চাষের আলু চাষ। সেই আলুর দক্ষিণবঙ্গে বেশি চাহিদা নেই। ওই আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া বাঁকুড়া আর বর্ধমানের মোট উৎপাদনের ৩০% আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠাতে হয়। চাষি আব্দুল হালিম, সৌমেন মণ্ডলদের দাবি, “আপৎকালীন খরচ তুলতে হিমঘরে আলু রেখেছেন অনেকে। ভিন্ রাজ্যে আলু যাচ্ছে না বলে চাষিরাও সেই আলু কিনছেন না।’’ জামালপুরের কাজল দাস বলেন, “ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো হয় বলেই চাষিরা দাম পান। তা না হলে অভাবী বিক্রি হবে।’’
এ দিন পাইকারি হারে ২৭-২৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। খুচরো বাজারে আলুর দাম ৩২-৩৫ টাকা কেজি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “জোগান বজায় রাখার জন্য সরকার কড়াকাড়ি করছে। তারপরেও খুচরো বাজারে আলুর দাম কমছে না। অভিযান চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy