গলসির বমপুরে। ছবি: কাজল মির্জা
দেশের অন্যতম কৃষিপ্রধান জেলা পূর্ব বর্ধমানেই গত তিন বছর ধরে চাষে লোকসান হচ্ছে, জানান চাষিরা। চাষি ও জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কৃষি-ঋণের জট, কৃষি-সামগ্রীর দামবৃদ্ধি, রফতানি কমে যাওয়া-সহ নানা কারণেই এই হাল।
জেলার মূল ফসল, ধান, আলু, পাট ও পেঁয়াজ। মন্তেশ্বর, মেমারি, কাটোয়ার চাষিদের অনেকেই বলছিলেন, হিমঘর মজুত রাখা আলু, বাড়ির মড়াইয়ে বেঁধে রাখা ধানের জোরেই তাঁদের ঘরে এসেছে মোটরবাইক। বাড়ি হয়েছে পাকা। এমনও ঘটেছে আলু চাষ করে খরচের তুলনায় ছ’গুণ লাভ হয়েছে। যাঁদের নিজেদের জমি নেই, তাঁরাও লাভের মুখ দেখেছেন, জানান মেমারির ফকির শেখ। ভাল দাম মেলায় প্রতি বছর বেড়েছে পেঁয়াজ চাষের এলাকাও। ফসলকে সঙ্গী করে উত্থান হয়েছে ছোট-মাঝারি শিল্পোদ্যোগের।
— কিন্তু পাঁচ বাণে এ সবই এখন ‘সুখ-স্মৃতি’, আক্ষেপ চাষিদের। তাঁদের কথায়, ‘চাষে লাভ তো এখন স্বপ্ন।’ তাঁদের মতে, কারণগুলি: প্রথমত, তিন বছরে কৃষি সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি। কালনার বেলেডাঙার চাষি একারাম শেখ জানান, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বীজ-সহ চাষের জন্য জরুরি নানা কিছুর দাম গত কয়েক বছরে বেড়েছে হু হু করে। একরাম জানান, বর্তমানে এক বিঘা জমিতে আলু চাষের খরচ, ২০-২৩ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি জমিতে গড়ে ৮০-৯০ বস্তা ফলন মেলে। কিন্তু গত বছর চাষি আলুর দর পান, ১৮০ টাকা প্রতি বস্তা (৫০ কিলোগ্রাম)। ফল, বিঘা প্রতি লোকসান, সাত-আট হাজার টাকা!
দ্বিতীয়ত: গত তিন বছরে কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও অনাবৃষ্টির জের। চাষিরা জানান, আলু তোলার মুখে বৃষ্টির ফলে জমিতে জল জমে ফসল পচে গিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়েছে পেঁয়াজও। গলসির এক চাষি জানান, দুর্যোগের পরে চাষিরা পেঁয়াজের মন প্রতি মাত্র দেড়শো টাকা দর পেয়েছেন। বিঘা প্রতি লোকসান, আট থেকে ১০ হাজার টাকা। একই পরিস্থিতি পাট, ধান, আনাজ চাষেও। বর্তমানে মজুত ধানের বস্তা পিছু দাম, ৮৪০ টাকা। কিন্তু তাতেও লোকসান।
তৃতীয়ত: কৃষিকর্তাদের একাংশের মতে, বিহার-সহ দেশের নানা রাজ্যে আলু রফতানি করতেন জেলার চাষিরা। কিন্তু গত তিন-চার বছরে ভিন্-রাজ্যেও আলুর ফলন ভাল হচ্ছে। ফলে গত বছরগুলিতে আলু কার্যত জলের দরে বিক্রি হয়েছে। কালনার মঙ্গল সরেন নামে এক চাষির মতে, গত তিন বছরে এমনই লোকসান হয়েছে যে, নতুন মরসুমে আলু চাষ করার খরচটুকুও ঘরে তোলা যায়নি। একই ছবি পেঁয়াজ চাষেও।
চতুর্থত, চাষের জন্য ফসল-নির্বাচনও বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন কৃষিকর্তারা। এক কৃষিকর্তা বলেন, ‘‘জেলার বেশির ভাগ চাষি লালস্বর্ণ ধানের চাষ করেন। এই ধানের চালের বিপণন নিয়ে বেশি আশা না করাই ভাল।’’
পঞ্চমত: সমস্যা বাড়িয়েছে কৃষি-ঋণ। চাষিরা জানান, তাঁদের অনেকেই চাষের জন্য ব্যাঙ্ক, সমবায় সমিতি থেকে মোটা অঙ্কের কৃষি-ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসানে সেই ঋণের জট আরও বেড়েছে। মজুত আলুর উপরে ঋণ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বহু হিমঘর কর্তৃপক্ষও।
কিন্তু চাষের এই হাল কী ভাবে প্রভাব ফেলছে জেলার অর্থনীতিতে, সমাজিক জীবনে, উঠছে সে প্রশ্নও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy