সুনসান বর্ধমানের কিসান মান্ডি। নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহ পার, কিন্তু ইয়েস ব্যাঙ্কে টাকা তোলার নিয়ন্ত্রণ ওঠেনি। এর জেরে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য দফতর। চেক কবে ভাঙানো যাবে, সে প্রশ্ন চুলছেন চাষিরা।
পূর্ব বর্ধমান-সহ তিন জেলায় চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক দিয়েছিল খাদ্য দফতর ও তাদের একাধিক এজেন্সি। তার মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ চাষির চেক ‘ক্লিয়ারেন্স’ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে টাকা মেলা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। খাদ্য দফতরের কর্তাদের যদিও দাবি, ‘ক্লিয়ারেন্স’ না হওয়া চেক নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে রাজ্য অর্থ দফতর কথা বলছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই ধাক্কা সামলানোর পরে, ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলে ইয়েস ব্যাঙ্কের বদলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হবে।
খাদ্য কমিশনার মনোজ আগরওয়াল বলেন, “চাষিদের কোনও টাকা মার যাবে না।’’
পূর্ব বর্ধমানে এখনও পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষ টন ধান কিনেছে খাদ্য দফতর। সহায়ক মূল্যে আরও এক লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। জেলার ৩০টি ‘সেন্ট্রাল প্রকিওরমেন্ট সেন্টার’ (সিপিসি) ও ১১৫টি সমবায়ের মাধ্যমে ওই ধান কেনা চলছে। কিন্তু প্রক্রিয়া চলাকালীনই ইয়েস ব্যাঙ্কের লেনদেনে নিয়ন্ত্রণ আনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আটকে যায় চেকও। বিভিন্ন ‘সিপিসি’র কর্মীরা জানাচ্ছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চেক নিয়ে তাঁদের কাছে ছুটে আসছেন চাষিরা। কিন্তু তাঁরাও নির্দিষ্ট জবাব দিতে পারছেন না। ফলে, চাষিদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এক কর্মীর কথায়, “আমাদের কাছেও ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক পড়ে রয়েছে। সেগুলোর কী হবে, কেউ ঠিক করে বলতে পারছে না।’’
গলসির চাষি খায়েস মণ্ডল, অমর রায়দের দাবি, “ব্যাঙ্কে চেক জমা নিচ্ছে না। খাদ্য দফতরও কিছু বলতে পারছে না। নোটবন্দির মতো অবস্থা। শুনছি টাকা পাব, কিন্তু কবে, সেটাই অজানা।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গলসি ২ ব্লকে প্রায় পাঁচশো চাষি চেক ভাঙাতে পারেননি।
বর্ধমান ১ ব্লকের কিসান মান্ডিতেও ‘সিপিসি’ চলছে। গিয়ে দেখা যায়, এক কর্মী থাকলেও চারিদিক সুনসান। বন্ধ ধান কেনাও। তারই মধ্যে চেক নিয়ে হাজির খেতিয়ার কাজী মিরাজউদ্দিন। তাঁর দাবি, “২ মার্চ চেক লেখা হয়। দু’দিন পরে চেক হাতে পাই। এখন ব্যাঙ্কে জমা নিচ্ছে না। কিসান মান্ডিও বলছে, এক সপ্তাহ পরে খোঁজ নেবেন। আমার ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড়।’’ রায়ানের সৌরভ দত্ত, খাঁড়গিলির রেজাউল মণ্ডলদেরও দাবি, “কারও কাছে ঠিক উত্তর পাচ্ছি না। চেক নিয়ে হয়রান হচ্ছি।’’ ভাতারের শিকড়তোড় গ্রামের পাঁচুগোপাল কোনার, বামশোর গ্রামের আবু তাহেরদেরও দুশ্চিন্তা, “ধান বিক্রির টাকায় মেয়ের বিয়ে, বাড়ির অনুষ্ঠান করার কথা। কিন্তু চেক পেলেও টাকা নেই।’’
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ধান কেনা আপাতত বন্ধ রয়েছে। অন্য কোনও ব্যাঙ্কের নতুন চেক জেলায় এলে তবেই ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। রাজ্য খাদ্য দফতর থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, গচ্ছিত টাকা থেকে চাষিদের কাছে থাকা চেক ‘ক্লিয়ারেন্স’ করে দিক ইয়েস ব্যাঙ্ক। পড়ে থাকা টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে রেখে দেবে খাদ্য দফতর। এই প্রস্তাবে রাজি হলে খাদ্য দফতর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেকেই ধান কিনবে বলে ঠিক হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক আবির বালি বলেন, “আশা করা যায়, সামনের সপ্তাহ থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy