ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র।
সকাল ১১টা ১০, মঙ্গলবার। তীব্র বিস্ফোরণের আওয়াজে কেঁপে উঠল দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) ৭ নম্বর গেট এলাকা। আশপাশ থেকে কর্মীরা এসে দেখেন, পড়ে রয়েছে দুর্গাপুরের শালবাগানের বাসিন্দা ওমপ্রকাশ চৌহান (৩৭) নামে এক ঠিকাকর্মীর ছিন্নভিন্ন দেহ। কাছেই পড়ে, গুরুতর জখম বামা রুইদাস নামে এক ঠিকা নিরপত্তারক্ষী। কিন্তু কী ভাবে ও কেন এই বিস্ফোরণ ঘটল, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার জায়গার পাশেই রয়েছে ছোট একটি বাগান। সেখানেই কাজ করছিলেন ওই দু’জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার কয়েকজন কর্মী জানান, আচমকা বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ শোনা যায়। ঝনঝন করে সিকিওরিটি অফিসের জানলাগুলির কাচ ভেঙে যায়। দুই কর্মী যেখানে পড়েছিলেন, সেখানে একটি গাছের অর্ধেকটি ঝলসে যায়। কারখানার আশপাশে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা। কী ঘটেছে, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি।’’
সংস্থার কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। পৌঁছন কারখানা কর্তৃপক্ষ ও কোকআভেন থানার পুলিশকর্মীরাও। জখম বামাবাবুকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বামাবাবুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই। ময়না-তদন্তের জন্য ওমপ্রকাশবাবুর দেহ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কেন এই ঘটনা? ডিপিএল পাওয়ার প্ল্যান্টের জেনারেল ম্যানেজার গোপীনাথ মাজির প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিদ্যুৎজনিত কোনও দুর্ঘটনা নয়। কোনও বিস্ফোরক ফেটে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। মৃতদেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে ঠিক কারণ জানা যাবে। ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের সুপারিশ করব।’’
এই পরিস্থিতিতে কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের জেরে কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক।’’ আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের দাবি, ‘‘সংস্থার মুখ্য নিরপত্তা আধিকারিকের অপসরণ চাই। ঘটনার এনআইএ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’ একই দাবি করেছেন বিএমএস নেতা নন্দদুলাল চক্রবর্তীও। তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও বিস্ফোরক থেকেই এই ঘটনা বলে আমাদের অনুমান।’’
ডিপিএল-এর একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করেছে, ঘটনাস্থলে ‘নাইট্রোগ্লিসারিন’-এর কন্টেনার দেখা গিয়েছে। কারখানার ল্যাবরেটরির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের দাবি, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ডিএপিএল-এ ওই বিস্ফোরকের ব্যবহার নেই। তা হলে, কী ভাবে, কী উদ্দেশ্যে ওই রাসায়নিক ঘটনাস্থলে দেখা গেল—এ সব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ডিপিএল-এর অন্দরে। সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারেরও প্রশ্ন, ‘‘সংরক্ষিত এলাকায় কী করে বিস্ফোরক এল!’’ ডিপিএল-এর জনসংযোগ আধিকারিক স্বাগতা মিত্র বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’’ তবে তাঁরও দাবি, ‘‘এটি বিদ্যুৎজনিত কোনও দুর্ঘটনা নয়।’’
ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) অক্ষত গর্গ। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, কারও গাফিলতিতে কোনও রাসায়নিক কারখানা চত্বরে এসেছিল। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত চলছে।’’
শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, ওমপ্রকাশবাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ডিপিএল কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy