বারাবনির ফরিদপুরে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। ছবি: পাপন চৌধুরী।
ফুটিফাটা দাওয়ায় কাঁচা কয়লার উনুনে ভাতের হাঁড়ি চড়িয়েছেন নমিতা চার। শতছিন্ন পলিথিনের ছাউনি দেওয়া রান্নাঘর। রান্না করার ফাঁকেই জানালেন বসতবাড়ি নিয়ে উদ্বেগের কথা।
বারাবনির সীমানা এলাকা ফরিদপুর গ্রাম। প্রাচীন এই গ্রামে শ’খানেক পরিবারের বাস। প্রত্যেকের মনেই এখন নমিতার মতো ভিটেমাটি হারিয়ে উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু বছরখানেক আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না বলে তাঁদের দাবি। এমন পরিস্থিতি কেন? বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি নতুন একটি খনি তৈরি হয়েছে। গ্রাম থেকে মাত্র শ’দুয়েক মিটার দূরে ইসিএলের কাছে ঠিকা নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা কয়লা খননের কাজ শুরু করেছে। ভূগর্ভস্থ কয়লার স্তর ভাঙতে অতি উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। তার জেরেই ভূপৃষ্ঠে কম্পন হচ্ছে। কাঁচা-পাকা বাড়ির দেওয়াল ও মেঝেতে চওড়া ফাটল ধরছে। দিনের পর দিন বাড়ছে সেই ফাটল।
নমিতা জানান, ৪১ বছর আগে বিয়ে হয়ে এই গ্রামে আসেন। তখন সবুজে ভরা ছিল এলাকা। এখন রুক্ষ। নিজের ভিটেতে এ ভাবে বিপন্ন হব ভাবিনি।’’ গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলার মাঝেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ঝুরঝুর করে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে সাবির আলির ঘরের। তিনি বলেন, ‘‘১০ জনের পরিবার। ভয় হয়, কখন ঘর মাথার উপরে ভেঙে পড়ে!’’ তিন পুরুষ ধরে এই গ্রামে বাস করছেন শেখ সামসুদ্দিন ও মনোজ চারেরা। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের এই বিপন্ন অবস্থার কথা জেনেও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা পাশে দাঁড়াননি। খনি কর্তৃপক্ষকে বহু বার বিস্ফোরণের ক্ষমতা কম করার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। স্থানীয় ক্লাবের কর্ণধার শেখ গফুরউদ্দিন বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ বছরের পুরনো ফুটবল প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে গেল। যে মাঠে খেলা হতো সেটি বিস্ফোরণে ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছে।’’
বিজেপির দাবি, শাসক দলের সদিচ্ছা নেই বলেই গ্রামবাসী বিপন্ন। দলের জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সমস্যাটি প্রায় এক বছরের। এখনও পঞ্চায়েত সমিতি কিছু করে উঠতে পারেনি।’’ সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে। গ্রামবাসীকে সন্ত্রস্ত করে কম দামে তাঁদের ভিটেমাটি বিক্রি করিয়ে সেই জমি বেসরকারি খনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়াই লক্ষ্য। তাতে কাটমানি খাওয়ার উদ্দেশ্যে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি উদ্যোগী হচ্ছে না।’’
বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের অসিত সিংহ সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘খনির কাজ বন্ধ করা যাবে না। তবে বিস্ফোরণের মাত্রা কম করার পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy