তপ্ত দুপুরে মাথা-মুখ ঢেকে রাস্তায়। কাটোয়ায়। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়া-পুরুলিয়াকেও মাঝেমধ্যে হারিয়ে দিয়েছে বর্ধমানের তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে শহরের পাশ দিয়ে দামোদর বইছে, ভিতরে বাঁকা নদী রয়েছে, রমনাবাগান রয়েছে, সেখানে এত গরম কেন?
পরিবেশবিদ, ভূগোল-বিশেষজ্ঞ, বন দফতর সব পক্ষই মনে করছে, এক দিকে তুলনামূলক ভাবে গাছের সংখ্যা, বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে যাওয়া পাল্লা দিয়ে জলাশয় কমা, দূষণ বাড়ায় এর কারণ। তার উপরে কৃষিপ্রধান এলাকায় খেত জমিতে ধান গাছের গোড়া পুড়িয়ে ফেলার প্রভাবও পরিবেশের উপর পড়ছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সনৎ গুছাইত বলেন, ‘‘নানা কারণে বর্ধমান ও তৎসংলগ্ন এলাকায় শুষ্ক বায়ুপুঞ্জ তৈরি হয়েছে। শুষ্ক বায়ুপুঞ্জ কয়েকদিন স্থিতিশীল হয়। যত দিন থাকবে, সেই কয়েক দিন গরম বাড়বে। তবে ১০-১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। এ বার সমুদ্র থেকে দূরে থাকা এলাকাগুলির মতো গরম অনুভব করেছে বর্ধমান।’’
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, জলীয় বাষ্পের দেখা নেই। সেই কারণে রাঢ় বাংলায় কালবৈশাখীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে যে ঝড়বৃষ্টি হয় তাও হয়নি। কালবৈশাখী বা ঝড়বৃষ্টি তাপমাত্রা সাময়িক কমায়। ফলে তাপমাত্রা এক ধাক্কায় হু হু করে বাড়তে পারে না। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টি না হওয়া কিংবা বাতাসে জলীয় বাষ্প না থাকার ফলে পশ্চিম দিক থেকে ঝাড়খণ্ডের গরম হাওয়া বা লু ক্রমাগত বয়ে আসছে। তার ফলে শুধু বর্ধমান নয়, কলকাতার তাপমাত্রাও বহু বেড়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই ধরনের ঘটনা গত ২৫ বছরে আমি দেখিনি। জলবায়ু বদলের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা তার প্রমাণ।’’
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তা, পরিবেশবিদ থেকে বনকর্তারা সবাই মনে করছেন, পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত বনাঞ্চল তৈরিতে পদক্ষেপ করা দরকার জেলায়। এ বছর এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চালকলের দূষণও। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অপূর্বরতন ঘোষের দাবি, ‘‘বর্ধমান শহরের ভিতরে অত্যাধিক পরিমাণে গাছ কম। জলাশয় শুকিয়ে গিয়েছে। বর্ধমান জেলাতেও বনাঞ্চলের ঘনত্ব কম। সব কিছুর প্রভাব পরিবেশের উপরে পড়ছে।’’ বন দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানের মোট ভৌগলিক আয়তনের অন্তত ৩৩ শতাংশ বনাঞ্চল থাকার কথা। সেখানে বনাঞ্চল রয়েছে ১৩.৮ শতাংশ। আর গাছ রয়েছে ২৭ শতাংশ এলাকায়।
অত্যাধিক গরম পড়ার ক্ষেত্রে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ১) ধানের গোড়া পুড়িয়ে দেওয়ার প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। ২) বর্ধমান শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে আবাসন। সাবমার্সিবল বা গভীর নলকূপ ব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছ। ভূগর্ভস্থ জল কমতে থাকায় জলাশয়গুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। ৩) শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার গত কয়েক বছরে বহু বেড়েছে। অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে স্থানীয় ভাবে পরিবেশ গরম হচ্ছে। ৪) বৈধ বা অবৈধ ভাবে যত গাছ কাটা হয়েছে, তার থেকে অনেক কম গাছ লাগানো হচ্ছে।
বর্ধমানে ‘গাছ মাস্টার’ বলে পরিচিত অরূপ চৌধুরী, পরিবেশ-গবেষক সন্তু ঘোষেরা বলেন, ‘‘বর্ধমান শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকে গোলাপবাগের তাপমাত্রা অনেকটা কম। কারণ গোলাপবাগে গাছের পরিমাণ অনেক বেশি। সে কারণে গাছ লাগাতে বলছি। খণ্ডবন তৈরিতে জোর দিচ্ছি।’’ (তথ্য সহায়তা: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy