সিঙ্গাপুরে অণিমা। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর বয়সে অনেকেই হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অনেকে ভোগেন নানা অসুখে। পূর্ব বর্ধমানের কালনার কৃষ্ণদেবপুরের বাসিন্দা, প্রাক্তন শিক্ষিকা অণিমা তালুকদার অবশ্য ব্যতিক্রম। ৭৮ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক স্তরের ২০০ মিটার দৌড় এবং তিন কিলোমিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় জিতলেন সোনা। শটপাটে ব্রোঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত অণিমা সোমবার সিঙ্গাপুর থেকে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক স্তরে সফল হয়ে ভাল লাগছে। তবে এখানেই থামতে চাই না। আরও বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করব।’’
বাধাগাছি প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা অণিমা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার ক্রীড়াবিদদের উৎসাহ দিয়ে আসছেন। নিজেও রাজ্য স্তরে বয়স্কদের নানা প্রতিযোগিতায় সফল হয়েছেন একাধিকবার। ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা যায়, ২৭ এপ্রিল চেন্নাইয়ের জহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় এক ঘণ্টার কম সময়ে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন অণিমা। প্রথম বার জাতীয় স্তরে সফল হওয়ার পরেই তাঁর ‘খিদে’ বেড়ে যায়।
খবর পেয়ে অনলাইনে ‘সিঙ্গাপুর মাস্টার্স ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাসোসিয়েশন’-এর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৭৫-৭৯ বছর বয়সের বিভাগে নাম লেখান। সে জন্য প্রস্তুতিও চালান। ওই আসরে ২৩টি দেশ যোগ দেয়। ২ জুন তিনি সিঙ্গাপুরে রওনা দেন। শনিবার হাঁটা প্রতিযোগিতায় প্রথম, শটপাটে তৃতীয় হন। রবিবার দৌড় প্রতিযোগিতাতেও সোনা জেতেন। আয়োজক সংস্থা তাঁর হাতে তুলে দেন একটি হলুদ গেঞ্জি ও জাতীয় পতাকা। রবিবার দুপুরে জাতীয় পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।
অনিমার এক ছেলে কলকাতার চিকিৎসক, দুই মেয়ে সরকারি চাকুরিজীবী। কালনায় একাই থাকেন। ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, প্রায় ২৪ বছর ধরে দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে থেকে তাদের নানা ভাবে উৎসাহ দেন। কবাডি, খোখো, ক্যারাটে-সহ বিভিন্ন খেলায় এলাকার প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়দেরও নিয়মিত উৎসাহ দিতে দেখা যায় তাঁকে।
তাঁর মেয়ে অসীমা তালুকদার বলেন, ‘‘এই বয়সে মা নিজে রান্না করা, ঘরমোছা, কাপড়কাচা-সহ সমস্ত কাজ নিজে করেন। ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা অনায়াসে হাঁটেন। সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতার আগে কখনও কৃষ্ণদেবপুর, আবার কখনও কালনা শহরের অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন মা।’’ তিনি জানান, অণিমার এ বারের লক্ষ্য ফিনল্যান্ডের আর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আসর।
অণিমাকে নানা পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়ে সাহায্য করেছেন কালনার এক স্কুল শিক্ষক সুমন চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘আমিও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নানা খেলায় যোগ দিই। একটি রাজ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতায় গিয়ে দেখি, সফল হওয়ার খিদে রয়েছে অনিমাদেবীর। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে বেশ কিছু মাঠে ঘুরে ঘুরে অনুশীলন করেছেন। বয়স একটা সংখ্যা মাত্র, উনি বার বার তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy