তিলাবনিতে। —নিজস্ব চিত্র।
বেসরকারি সংস্থাকে বাঁকোলা এরিয়ার তিলাবনির দু’টি খনি এলাকা থেকে কয়লা তোলার বরাত দিয়েছে ইসিএল। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছেন শ্রমিকদের একাংশ। মঙ্গলবার প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। প্রথমে তা বাতিল করে ইসিএল জানায়, শীঘ্রই প্রকল্প চালু হবে। পরে সন্ধ্যায় অবশ্য সংস্থার সিএমডি ধানবাদ থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
ইসিএলের বাঁকোলা এরিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে, তিলাবনি কোলিয়ারির ১ ও ২ নম্বর এলাকায় কয়লা উত্তোলনের বরাত দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থাকে। তারা যন্ত্রের সাহায্যে কয়লা তুলবে। কয়লা কাটার সব পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। এ দিন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল ইসিএলের সিএমডি সমীরণ দত্তের। তৈরি হয়েছিল মঞ্চ।
সকাল ১০টা নাগাদ এআইসিসিটিইউ, সিটু, আইএনটিইউসি-র কর্মী-সমর্থকেরা এবং এলাকার শ্রমিকদের একাংশ অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই দুই খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের অন্যত্র বদলির চেষ্টা হচ্ছে। দুপুর দেড়টা নাগাদ অনুষ্ঠান বাতিল করা হলে বিক্ষোভ থামে।
সিটু অনুমোদিত ‘সিএমএসআই’র সাধারণ সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী, এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, সরাসরি বেসরকারি সংস্থার হাতে খনি তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এতে উত্তোলিত কয়লা বিক্রির অধিকার চলে যাবে বেসরকারি হাতে। খনিগর্ভে পর্যাপ্ত কয়লা মজুত থাকা সত্ত্বেও খোলামুখ খনি বন্ধ করে দিচ্ছে কেন্দ্র। সেগুলি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। খনিকর্মীদের অন্যত্র বদলির পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁরা এ সব হতে দেবেন না।
তাঁদের দাবি, কোল ইন্ডিয়াকেই খনি চালাতে হবে। সঙ্গে অভিযোগ তোলেন, এরিয়া কর্তৃপক্ষ তিলাবনি ১ এবং ২ নম্বর খনির কর্মীদের অন্যত্র বদলির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা অনুষ্ঠান মঞ্চে সিএমডি’র হাতে দাবিপত্র দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন এ দিন। শেষ পর্যন্ত তিনি না আসায় তা হয়নি। তবে পরে ‘ভার্চুয়াল’ উদ্বোধন হয়েছে বলে ইসিএল সূত্রের খবর। কাল, বৃহস্পতিবার তাঁরা টানা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করবেন বলে শ্রমিক নেতাদের দাবি।
ইসিএলের বাঁকোলা এরিয়ার পার্সোনাল ম্যানেজার হীরক সরকার জানান, জরুরি বৈঠক থাকায় সিএমডি আসতে পারেননি। শীঘ্রই তিনি ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় খনির উদ্বোধন করবেন। ইসিএলের ডিরেক্টর টেকনিকাল (অপারেশন) নীলাদ্রি রায়ের দাবি, লভ্যাংশের অংশীদারি (রেভিনিউ শেয়ারিং) এবং মাইন ডেভেলপার অ্যান্ড অপারেটর (এমডিও) নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অনেকে দু’টি গুলিয়ে ফেলছেন। ‘এমডিও’ পদ্ধতিতে দীর্ঘদিনের জন্য (১৮-২৫ বছর) বেসরকারি সংস্থাকে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে উত্তোলিত কয়লা বিক্রির বিষয়টি কোল ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। অন্য দিকে, ‘রেভিনিউ শেয়ারিং’ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন হলে তা বিক্রির দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে থাকে। সে ক্ষেত্রে কোল ইন্ডিয়া সঙ্গে মুনাফা ভাগ করে বেসরকারি সংস্থা।
নীলাদ্রির দাবি, একাদশ জাতীয় কয়লা বেতন চুক্তি অনুযায়ী কোল ইন্ডিয়ার বেতন কাঠামো উন্নত হয়েছে। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন না হলে স্থায়ী কর্মীদের বেতন ভবিষ্যতে মেটানো যাবে না। কারণ, বেসরকারি সংস্থা যন্ত্রের সাহায্যে কয়লা উত্তোলন করে। তার খরচ অনেক কম। তিনি মনে করেন, অযথা ‘এমডিও’-র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় স্থায়ী কর্মীদের কোনও ক্ষতি হবে না। ইতিমধ্যেই ইসিএলের তিলাবনি ও পরাশিয়া ভূগর্ভস্থ খনি এবং ইটাপাড়া, হুড়াশি খোলামুখ খনি ‘এমডিও’ পদ্ধতিতে বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে কয়লা শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। গোটা প্রক্রিয়ার উপরে কোল ইন্ডিয়ার মজবুত নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
তিনি জানান, কেবল মাত্র অলাভজনক খনির কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব ‘রেভিনিউ শেয়ারিং’-এর মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়। চিনাকুড়ি, ময়রা ও মধুজোড় ভূগর্ভস্থ খনি এই প্রক্রিয়া মেনে ঠিকা সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy