শহরের নানা এলাকার নর্দমায় দেখা যায় এমন ছবি। নিজস্ব চিত্র।
সিটি সেন্টারে নর্দমা পরিষ্কার করছিলেন পুরসভার সাফাইকর্মীরা। যা আবর্জনা তুলছিলেন তার বেশিরভাগই প্লাস্টিক। ওই কর্মীরা জানালেন, শুধু এখানে নয়, শহরের সর্বত্রই নর্দমা থেকে উঠে আসা আবর্জনার অধিকাংশই প্লাস্টিকের প্যাকেট। সে কারণেই বড় নর্দমাগুলির মাটি তুলে সংস্কার করার পরেও বর্ষায় জল জমা নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছে না দুর্গাপুর পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, শত-শত প্লাস্টিকের প্যাকেট নর্দমার মুখে জমে গিয়ে জল আটকে যেতে পারে। জলমগ্ন হতে পারে এলাকা।
দুর্গাপুর শহরকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার উদ্যোগ চলছে বহু দিন ধরে। পুরসভার কর্তাদের দাবি, প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহারের রমরমা আগের থেকে কমেছে ঠিকই, তবে তা যথেষ্ট নয়। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শহরে ৪০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুরসভা। অভিযান চালানোর পাশাপাশি সচেতনতা গড়ে তোলারও নানা উদ্যোগ হয়। পরে মহকুমা প্রশাসনের তরফেও প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবু একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা মুনাফা বাড়াতে কম দামি ক্ষতিকারক নিষিদ্ধ প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের একাংশের আবার দাবি, ক্রেতাদের অনেকে জিনিস কেনার পরে প্লাস্টিকের প্যাকেট দিতে জোরাজুরি করেন।
গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপুরে বর্ষার সময়ে বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেটের। ম্যানহোল ও নর্দমার মুখে প্লাস্টিক জমে জল আটকে যায়। বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভা ও প্রশাসনের তরফে মাঝে-মাঝে অভিযান হয়। সচেতনতা তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ করা হয়। বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফেও প্রচার চলে। কিন্তু প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ পড়ে না। সিটি সেন্টার থেকে বেনাচিতি, সর্বত্রই নর্দমা পরিষ্কারের সময়ে প্রচুর প্লাস্টিক মিলছে বলে জানাচ্ছেন সাফাইকর্মীরা। তাতে মাথাব্যথা বেড়েছে পুরসভার কর্তাদের।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে যন্ত্র দিয়ে শহরের সব বড় নর্দমার গভীরতা বাড়িয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ফলে, জল বয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। কিন্তু, পাড়ার ছোট ও মাঝারি নর্দমাগুলির মুখে প্লাস্টিক জমে জলের প্রবাহ আটকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মেয়র পারিষদ (নিকাশি) প্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যে মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। ঠিক হয়েছে, সব জায়গায় দু’টি করে ডাস্টবিন দেওয়া হবে। তার একটিতে প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য এবং অন্যটিতে প্রক্রিয়াকরণের যোগ্য বর্জ্য ফেলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে শহরবাসীকে। এ সচেতনতা প্রসারের পাশাপাশি প্রয়োজনে ধরপাকড়ও করা হবে বলে জানান তিনি। প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে অনেকেই প্লাস্টিকের বিপদ সম্পর্কে সচেতন নন। নিজেদের স্বার্থেই প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে লড়াই আরও তীব্র করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy