Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Durgapur

জলবন্দি দুর্গাপুরে দিনভর ভোগান্তি, ক্ষোভ

রাতে নাগাড়ে তুমুল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শহরের প্রধান প্রাকৃতিক নিকাশি নালা তামলা উপচে দু’পাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির পরে জলমগ্ন শহরে স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধারকাজ। মেনগেট এলাকায়। ছবি: বিকাশ মশান

বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির পরে জলমগ্ন শহরে স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধারকাজ। মেনগেট এলাকায়। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৫৭
Share: Save:

দফায়-দফায় অবরোধ, বিক্ষোভ-সহ নানা ঘটনা ঘটল জলমগ্ন দুর্গাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতের প্রবল বৃষ্টির জেরে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জলে ডুবে থাকল দুর্গাপুরের বহু এলাকা। সন্ধ্যা নাগাদ পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয় বলে জানিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। এ দিন সন্ধ্যায় জেলা সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংহ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্গাপুর মহকুমায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০২ মিলিমিটার।

জল থইথই

রাতে নাগাড়ে তুমুল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শহরের প্রধান প্রাকৃতিক নিকাশি নালা তামলা উপচে দু’পাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। শহরের নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। মেনগেট, কাদা রোড, গ্যামন কলোনি সংলগ্ন এলাকা, রায়ডাঙা, তেঁতুলতলা কলোনি, শিমুলতলা, বেনাচিতির বিদ্যাসাগরপল্লি, শ্রীনগরপল্লি, ৫৪ ফুট রোডের সারদাপল্লি, আনন্দপুরি, তপোবন, ডিএসপি টাউনশিপের একাংশ, আইকিউসিটি-সহ নানা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বহু বাড়ির একতলায় জল ঢুকে যায়। ডুবে যায় বাড়ির গ্যারাজে রাখা গাড়ি, মোটরবাইক। জলের তলায় চলে যায় কুয়ো, পানীয় জলের জলাধার, জল তোলার পাম্প। ফলে, শুক্রবার দিনভর শহরে পানীয় জলের সমস্যা ছিল।

অভাব-অভিযোগ

পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেট ডেয়ারি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বেহাল নিকাশির অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ করেন সকালে। তাঁদের অভিযোগ, বৃষ্টির জলে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। বছর পাঁচেক ধরে প্রতি বার বর্ষায় একই সমস্যা হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুনীল চট্টোপাধ্যায় ফোনে পুলিশকে আশ্বস্ত করেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এলাকা জলমগ্ন হওয়ার অভিযোগে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সগড়ভাঙা গ্রামের কাছে রেলের একটি স্টক ইয়ার্ডের কাছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কাউন্সিলর অঙ্কিতা চৌধুরী ও পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, ওই ইয়ার্ডে অপরিকল্পিত ভাবে পাঁচিল দেওয়ার কাজ হওয়ায় এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানেও পুলিশ যায়। কাউন্সিলর জানান, সমস্যার কথা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) ও পুরসভাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

যা ক্ষতি

রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে জল জমে যাওয়ায় শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় একটি পিগ আয়রন কারখানায়। দুপুরে জল নামার পরে, ফের শুরু হয় উৎপাদন। পাশাপাশি, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের আরতি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আলিমুদ্দিন শেখ, শেখ লাল মহম্মদ, শেখ আনোয়ারদের দাবি, তাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের বাইরে থাকা কয়েকটি সেচনালা ঠিক মতো সংস্কার হয় না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শেখ নাফিজুল হক বলেন, ‘‘সেচনালাগুলির সংস্কারের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক কার্যালয়ে লিখিত আর্জি জানানো হয়েছে।’’

প্রশাসনের পদক্ষেপ

মেন গেট এলাকায় আটকে পড়েন কয়েক জন বাসিন্দা। স্থানীয় যুবকেরা রাতেই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ঘটনাস্থলে যান মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে। বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের সদস্যেরা দু’টি স্পিডবোটে করে তাঁদের উদ্ধার করে আনেন। একই ভাবে কাদা রোড এলাকাতেও চলে উদ্ধারকাজ। প্লাবিত এলাকার মানুষদের জন্য খাবার ও থাকার বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানায় আরতি পঞ্চায়েত।

এ দিকে, শহরের বিস্তীর্ণ অংশ জলের তলায় চলে যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, ‘‘রাস্তা, নিকাশি-সহ সাধারণ নাগরিক পরিষেবাগুলি যে বেহাল, তা আর এক বার প্রমাণিত হল।।’’ তবে দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ হয়েছে। প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি বড় নর্দমা তৈরির পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণবাবু জানান, কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিপোর্ট তৈরি করার কাজ চলছে। অণ্ডালে দেওয়াল চাপা পড়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Calamities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE