প্রতীকী ছবি।
গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে রাজ্য সরকার ‘জল স্বপ্ন প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এই প্রকল্প রূপায়ণে চূড়ান্ত ঢিলেমি দেখা যাচ্ছে, অভিযোগ বিরোধীদের। বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ, চলতি অর্থবর্ষে (২০২১-২২) লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ পরিবারকে জলের গৃহ-সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ১৫ শতাংশ পরিবারই তা পেয়েছে। যাঁরা তা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের বাড়িতেই নিয়মিত জল পড়ে না বলেও অভিযোগ। যদিও জেলা প্রশাসন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) দাবি, এ পর্যন্ত জেলায় ৪০ শতাংশ পরিবার জলের গৃহ-সংযোগ পেয়েছে। বাকি পরিবারগুলিকেও দ্রুত তা দেওয়া হবে।
২০২০-র জুলাইয়ে, গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি-বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দিতে ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে দু’কোটি বাড়িতে এই প্রকল্পে জল দেওয়া হবে। খরচ হবে, ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে কাজ শুরু করে জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরও। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যবেক্ষণের পরে, জেলার আটটি ব্লকের প্রায় ৫০০টি গ্রামের দু’লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৯১টি পরিবারকে জলের গৃহ-সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যামাত্রা নেওয়া হয়। ঠিক হয়, দু’টি পর্যায়ে এই কাজ শেষ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে, চলতি অর্থবর্ষে দেড় লক্ষ পরিবার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে, পরের অর্থবর্ষে বাকি পরিবারগুলি গৃহ-সংযোগ পাবে।
বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, “খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিবারকেই জলের গৃহ-সংযোগ দেওয়া গিয়েছে। সংখ্যার বিচারে, যা মাত্র ৩৫ হাজারের আশপাশে। অনেকের বাড়িতে গৃহ-সংযোগ দেওয়া হলেও, জল পড়ে না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “এই প্রকল্পটি আদতে কেন্দ্রের জল জীবন মিশন প্রকল্পের নকল।” কটাক্ষ করেছে সিপিএম-ও। দলের নেতা বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “রাজ্য সরকার খাতায়-কলমে নানা কথা বলে। কিন্তু বাস্তব চেহারাটা সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গ্রীষ্মে গ্রামের বাসিন্দারা চরম পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন।” যদিও তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “বিরোধীরা নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ করে। কেন্দ্রের জল জীবন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে রাজ্যভিত্তিক গৃহ-সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে
দেশের মধ্যে সেরা পশ্চিমবঙ্গ।”
অভিযোগ মানেননি প্রশাসনের কর্তারাও। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবি, ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ, প্রায় এক লক্ষ ১৯ হাজার পরিবারে জলের গৃহ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত রায় বলেন, “দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। বছর শেষের আগে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।”
সম্প্রতি প্রকল্পটির কাজকর্মের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে একটি সমীক্ষা বৈঠকও হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সঞ্জয় পাল বলেন, “বিস্তারিত আলোচনায় একাধিক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। গৃহ-সংযোগের বিষয়ে, কোথায় কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, তা ব্লকগত ভাবে তালিকা ধরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও ব্লক অফিসাররা পর্যবেক্ষণ করে সমাধান করবেন।”
এ দিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে বর্ষার আগে পর্যন্ত জেলায় জল-সঙ্কট দেখা যায়। সালানপুর, বারাবনি, রানিগঞ্জ, অণ্ডাল ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে এই সমস্যা গুরুতর। বারাবনির ইটাপাড়ার সুনন্দ কর্মকার, সালানপুরের ডাবরের বীণাপাণি মণ্ডলেরা বলেন, “বাড়িতে জলের সংযোগ এখনও পাইনি। কবে পাব, তা-ও জানি না। পানীয় জল সংগ্রহ করতে খুবই সমস্যা হয়।”
তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, এই ব্লকগুলির বহু গ্রামেই পাইপলাইন পাতা হয়েছে। যেমন, চেলোদ, অণ্ডাল, ধান্ডারডিহি, চাপুই, রতিবাটি, বারাবনি, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, খোট্টাডিহি, কেন্দ্রা, মাজিয়ারা, কাশকুলি, ছোটকোড়া প্রভৃতি এলাকায় পাইপলাইন পাতার কাজ শেষ হয়েছে। তবে বহু পরিবারে গৃহ-সংযোগ দেওয়ার পরেও জল না পড়ার অভিযোগটির বিষয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই সমস্যার পিছনে দু’টি কারণ আছে। প্রথমত, কিছু অঞ্চলে নদী বা জল-প্রকল্প থেকে জলাধারে জল তোলার পাইপলাইন ফুটো করে ‘অবৈধ’ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে, জলাধারগুলি ভর্তি হচ্ছে না। জলের চাপ ঠিক মতো না থাকায় দূরবর্তী এলাকার পাইপে জল পৌঁছচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, কোথাও আবার জলাধারের পাইপলাইনের সঙ্গে গৃহ-সংযোগের পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া
সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy