Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Drinking water

জলের জন্য হুড়োহুড়ি, বিক্ষোভ

ট্যাঙ্কার থেকে জল নিতে বা গাড়িতে জলের পাউচ এলাকায় গেলে তা নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এ দিন মামরাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, জলের ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে আছে পাড়ার মোড়ে।

ট্যাঙ্কার থেকে জল নিতে লাইন। নিজস্ব চিত্র

ট্যাঙ্কার থেকে জল নিতে লাইন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০১:০৪
Share: Save:

ব্যারাজের লকগেট মেরামতের কাজে যত সময় লাগছে, জল নিয়ে তত হাহাকার বাড়ছে দুর্গাপুরে। কোথাও কাউন্সিলরের স্বামীকে ঘিরে বিক্ষোভ, কোথাও পুরসভার পাঠানো ট্যাঙ্কার বা পাউচের জল নিতে করোনা-বিধি ভেঙে হুড়োহুড়ি মতো ঘটনা ঘটে সোমবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শহরবাসীর অনেকে। শহরের মেয়র দিলীপ অগস্তি অবশ্য বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত জল মিলছে না, এটা ঠিকই। তবে সোমবারও কয়েকটি ওয়ার্ডে জল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো, পাউচ বিলির মতো বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’

জলের সমস্যা মেটাতে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি এ দিন দুর্গাপুরে পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নিয়ে বৈঠক করেন। পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠক করা হয়েছে। আরও দু’তিন দিন যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, সে কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিন হাজার লিটারের একশো ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনে ৩-৪ বার করে ট্যাঙ্কার পাঠানো হবে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর প্রতিদিন ৫ লক্ষ করে পাউচ দেবে। কোথায়-কোথায় জল পাঠাতে হবে সব নির্দিষ্ট করা হয়েছে বৈঠকে। ডিএসপি টাউনশিপে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ জল সরবরাহ করবেন। তার পরেও যদি দরকার পড়ে, তাহলে জল পাঠানো হবে।’’

রবিবার ডিপিএল কলোনিতে জল আসেনি। তবে সোমবার সেখানে কিছুক্ষণের জন্য জল দেওয়া হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের দাবি, জলের তোড় কম থাকায় দোতলায় জল ওঠেনি। নীচ থেকেই জল সংগ্রহ করতে হয়েছে। বিধাননগরের হাডকো মোড়, ব্যাঙ্ক কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রবিবার জল পেলেও সোমবার আর আসেনি। এলাকার বিভিন্ন আবাসনে এক হাজার টাকার বিনিময়ে ট্যাঙ্কারের জল কেনার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সেপকো টাউনশিপেও এ দিন জল মেলেনি। রবিবার দুপুর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত এক ফোঁটাও জল আসেনি বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সেখানকার কিছু বাসিন্দা।

৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লেবারহাট এলাকার দাসপাড়ার বাসিন্দারা এ দিন স্থানীয় কাউন্সিলর বর্ণালি দাসের স্বামী, তৃণমূল কর্মী পার্থসারথি দাসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, পুরো এলাকা কার্যত নির্জলা হয়ে রয়েছে। দ্রুত জলের ট্যাঙ্কার আসার প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভ থামে। ডিপিএলের প্রশাসনিক ভবনে জল না থাকায় এ দিনের মতো মহিলা কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

মেয়র জানান, এ দিন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ তাঁদের টাউনশিপে জল দিয়েছেন। পুরসভা ছ’টি ওয়ার্ডে জল দিয়েছে। এ ছাড়া, সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ট্যাঙ্কার পাঠানো শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে ব্যারাজে গেট বিপর্যয়ের পরে, পুরসভা বিকল্প জলের উৎস হিসেবে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়েছে শহরে। পাম্প থেকে জল তুলে ট্যাঙ্কারে করে এলাকায় এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। তবে ট্যাঙ্কার নিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাক্টর না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। মেয়র বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি, বালির ট্রাক্টর বা কাঁকসা ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর এলাকায় চাষে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের ব্যবস্থা করে দিতে। দশটি ট্রাক্টর পেলে সুবিধা হবে।’’ বস্তি এলাকার বাসিন্দারা সাধারণত রাস্তার পাশের কল থেকে জল নেন। তাঁদের কাছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাউচ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।

ট্যাঙ্কার থেকে জল নিতে বা গাড়িতে জলের পাউচ এলাকায় গেলে তা নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এ দিন মামরাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, জলের ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে আছে পাড়ার মোড়ে। আগে জল নেওয়ার জন্য রীতিমতো জটলা সেখানে। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। দূরত্ব-বিধিরও বালাই নেই।জলের আকালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শিল্প ক্ষেত্রেও। ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, যা জল মজুত আছে, তাতে সম্ভবত সোমবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে। মেয়র বলেন, ‘‘রবিবার রাতে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতরের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত সমস্যা নেই। তবে মঙ্গলবার হয়তো একটি ইউনিট বন্ধ করতে হতে পারে।’’ ইতিমধ্যে মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৮ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ করা হয়েছে। এর পরে ডিপিএলেরও একটি ইউনিট বন্ধ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘তেমন কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে হচ্ছে।’’

অঙ্গদপুরের একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার আধিকারিক কাজল দে জানান, জলাভাবে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার কাছ থেকে জল নিই। পুরসভা জল দিতে পারছে না। সোমবার সকাল থেকে সমস্যা শুরু হয়েছে। কম-বেশি বিপাকে পড়বে সব কারখানাই।’’ তবে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি) আপাতত ছ’-সাত দিন চলার মতো জল মজুত আছে বলে জানিয়েছেন বার্নপুর ইস্কোর সিইও তথা ডিএসপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও এমভি কামালকর।প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, শিল্পক্ষেত্রে সে ভাবে জলের সমস্যা এখনও নেই। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চলে যাবে। তার পরে যদি জল লাগে, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন এখনও স্বাভাবিক আছে। তবে ব্যারাজ থেকে জল না মিললে হয়তো সমস্যা হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Water Problem Water Crisis Drinking water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy